Quantcast
Channel: Truth Revealer
Viewing all articles
Browse latest Browse all 358

আয়রনি

$
0
0

মূল: সাদিয়া হোসেইন
সম্পাদনা: শরীফ আবু হায়াত অপু


بِسْــــــــــــــــــمِ اﷲِالرَّحْمَنِ اارَّحِيم


আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুতে যারা খুশি, তারা কেউ তাঁকে খুন করতে দেখে নি, ধর্ষণ করতে দেখে নি, এমন কি দুই চোখেও তাঁকে দেখে নি। আর তাঁর মৃত্যুতে যারা অখুশি, তাদের একটা বড় অংশ তাঁকে কাছ থেকে দেখেছে, তার সাথে এক জীবন কাটিয়েছে, তাঁর একটা বক্তৃতা শুনেছে কিংবা কারাগারে এক সাথে কিছু বিকাল কাটিয়েছে! 

অথবা আমার মতো যারা মনে করত জামাতের নেতা মাত্রই শুওরের বাচ্চা। রাজাকার। যুদ্ধাপরাধী। আমরা অবাক বিস্ময়ে আবিষ্কার করলাম কাদের মোল্লার বিচার এবং হত্যা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। 


 ’কসাই কাদেরদের’ ছাঁচে আমরা যাকে দেখতে চেয়েছিলাম, যেই ইমেজ ছোটবেলা থেকে শাহরিয়ার কবির আর জাফর ইকবাল গুলে আমাদের খাইয়ে দিয়েছে। ছাগুলে দাঁড়ি, নাকের লোম ছেঁড়া মানুষটা। যেই মানুষটা সময়ে অসময়ে বউ-ছেলেমেয়ে পিটায়, আর নানা কুকর্মের জন্য পুলিশের কাছে ধরা পড়েই হাউ মাউ করে কাঁদে। ঘোঁত ঘোঁত শব্দ আর মুখ খারাপের ইমেজটা শেষ মেষ তার ভিতর থেকে বহু কষ্ট করেও বের করা গেলই না। এই কাদের মোল্লা শেষ পর্যন্ত ’ভি’ দেখিয়ে গিয়েছেন, তাঁর স্ত্রীও! রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা করেন নি, শেষ পর্যন্ত দাবি করে গিয়েছেন তিনি নির্দোষ এবং এভাবে যদি তাঁর মৃত্যু হয়, তবুও তিনি ’খুশি’, কারণ সেটা শহিদী মৃত্যু!  

 আয়রনি হচ্ছে, যারা নিজের চোখ দিয়ে দেখতে পারেন না, ছোটবেলার গুলিয়ে দেয়া ইমেজটা এখনও চোখের সামনে ধরে আছেন, তারা বুঝতে পারছে না যে এভাবেই একজন হিরোর জন্ম হয়। 

 আয়রনি হচ্ছে, হাজার হাজার মৃত্যু আর ধর্ষণের দায় যার ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে, সেই মানুষটার ফাঁসির রায় হয়েছে, মাত্র একজনের সাক্ষ্যে, যে এর আগে দুই বার দুই জায়গায় দুইটা ভিন্ন সাক্ষ্য দিয়েছে। আর এবার সাক্ষ্য দিয়েছে মুখ ঢেকে! শাহবাগে যেই দুই বছরের বাচ্চাটা ’ফাঁসি চাই’ ফেস্টুন নিয়ে দাঁড়িয়েছিল, তাকেও যদি জিজ্ঞাসা করেন, আমি যদি তিন জায়গায় তিন কথা বলি, তাহলে আমার কথা বিশ্বাসযোগ্য কি না, সেও বলে দিবে, ’উহু’! 

 আয়রনি হচ্ছে, বেয়াল্লিশ বছর অপেক্ষা করে যেই রায় দেয়া হলো এবং কার্যকর করা হলো, যাতে বেয়াল্লিশ বছর আগের ক্ষত ভুলে আমরা একসাথে সামনে আগাতে পারি, সেই রায়ই দেশের মানুষকে শত ভাগে ভাগ করে দিয়ে গেল। বিচার করা আওয়ামী লীগের নিজেস্ব এক মন্ত্রীও শেষ দিন পর্যন্ত বলে গিয়েছেন--মানুষটা নির্দোষ, বিচার প্রক্রিয়া ঠিক ছিলো না: এই মানুষ সেই মানুষ না! এই মুহূর্তে আপনি বাংলাদেশের যে কোন জায়গায় গিয়ে যদি একটা সত্যিকারের সার্ভে করতে পারেন, তাহলে দেখবেন, বেশির ভাগ মানুষ মনে করে বিচার প্রক্রিয়াটা স্বচ্ছ ছিলো না, বেশির ভাগ মানুষ বিশ্বাস করে এই কাদের সেই কাদের না এবং দেশের মানুষ সুবিচার পায় নি!

আয়রনি যে আমরা কলঙ্কমুক্তির নামে আরো কলঙ্ক গায়ে মেখেছি। যে জাতিসংঘকে আমেরিকাও নিজের দলে ভেড়াতে পারে নি ইরাক যুদ্ধের সময়ে, সেই জাতিসংঘ পর্যন্ত বিচারকে ’অবিচার’ বলেছে। অবিচার মনে করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ থেকে শুরু করে অসংখ্য সংগঠন, অনেক দেশ। 

আমাদের দেশের জন্য স্মরণকালের সবচেয়ে বড় আয়রনি হচ্ছে, একজন ’যুদ্ধাপরাধীর’ মৃত্যুতে সব ঘটনা প্লে আউট করছে একজন ’হিরোর’ মৃত্যুর মতো! যাদের আমরা আমাদের হিরো জ্ঞানে বড় হয়েছি তাদের কারো মৃত্যুই এমনটা হয়নি। কাদের মোল্লা হয়ে গেলেন বহুবার পড়া ‘দুরন্ত পথিকের’ বাস্তব জীবন সংষ্করণ।

আয়রনি হচ্ছে, এই ফাঁসিটাই এক ভাবে কাদের মোল্লার স্বপ্ন পূরণ। তাঁর বিচার উপলক্ষ্যে পৃথিবীর অসংখ্য মুসলিম তাঁর জন্য দুই হাত তুলে দোআ করেছে। আমি হারুন ইয়াহিয়া, ইউসুভ আল কারজাভীর মত মানুষদের দেখেছি তাঁর পক্ষে কলম/টুইটার যুদ্ধে নামতে। অসংখ্য মানুষ তাঁর জন্য রোজা রেখেছে, নফল নামাজ পড়েছে, কুরআন খতম দিয়েছে।

আয়রনি হচ্ছে, জামাত না করা কিন্তু ইসলাম ভালোবাসা মানুষগুলোও শেষমেশ তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলো। আমি, এই আমি তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।

আয়রনি হচ্ছে, কাদের মোল্লার ফাঁসি হয়েছে শুক্রবারে, বৃহষ্পতিবার দিবাগত রাত্রিতে। যেন আল্লাহ নিজের হাতে সময়টা ঠিক করেছেন। আজ ফাঁসি হবে -- এমন ঘোষণার পরেও সময় পিছিয়ে এনেছেন। সরকারের বিজ্ঞ অংশের মতামতের ১৫ই ডিসেম্বর রাত থেকে এগিয়ে এনছেন।

আয়রনি হচ্ছে, বেশির ভাগ মানুষ যেখানে মৃত্যুর আগে বিন্দু মাত্র প্রস্তুতি নিতে পারে না, এই মানুষটা স্বজনদের বিদায় দিতে পেরেছেন, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে পেরেছেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর কাছের মানুষগুলো তাঁকে নিয়ে গর্বিত ছিলো, সরকার এবং মানুষের বিপরীতে দাঁড়িয়ে। আপনি যদি ইসলামে ভালো মৃত্যু, খারাপ মৃত্যু নিয়ে বিন্দু মাত্র পড়াশোনা করে থাকেন তাহলে জানবেন, এগুলো সবই ’ভালো মৃত্যুর’ নিদর্শন। আপনি যে কোন আলেমের কাছে নাম ধাম ঘটনা না বলে যদি জিজ্ঞাসা করেন, সবাই এক বাক্যে স্বীকার করবে, এমন পরিণতি তাঁরা নিজেরাও চায়।

আয়রনি হচ্ছে, আপনি আবেগের চোখে ভাবছেন, দোষীই তো, বিচার যেমনই হোক, শাস্তি হলেই হয়েছে! কিন্তু বুঝতে পারছেন না, ঘটনা এখানেই শেষ না। কাদের মোল্লা আর তাঁর পরিবার আখিরাতের দিন এই অভিযোগ নিয়ে আপনার বিপরীতে দাঁড়াবে যে তাঁদের উপর অন্যায় করা হয়েছিলো এবং আপনি তখন এই অবিচারকে একটিভলি সমর্থন করেছেন।

আয়রনি হচ্ছে আপনি যখন তাদের বিপরীতে দাঁড়াবেন, তখন আপনার যেই দুইটা নিয়ে জোর দাবি করার ছিল, সেই দুইটার কোনোটাই বলতে পারবেন না... আপনি বলতে পারবেন না যে আপনি নিজ চোখে অতসব কুকর্ম করতে দেখেছেন, তাই এই বিচার চেয়েছেন। আপনি এও বলতে পারবেন না যে আপনি যাদের উপর বিচারের দায় ভার দিয়েছেন, তাদের বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে আপনি পুরাপুরি সন্তুষ্ট ছিলেন।

বাদ বাকি যা বলতে পারবেন, শাহবাগে শুনেছি তাঁর ফাঁসি হওয়া দরকার, তিনি ’ভি’ দেখিয়ে আমাকে রাগিয়ে দিয়েছিলেন, এগুলোর কোনোটাই একজন মানুষকে খুন করার জন্য যথেষ্ট কারণ না। এবং এটাই সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে স্থায়ী আয়রনি।

মুমিনদের মধ্যে কিছু লোক রয়েছে যারা আল্লাহকে দেয়া তাদের প্রতিশ্রুতি সত্যে বাস্তবায়ন করেছে। তাদের কেউ কেউ(শাহাদাত বরণ করে) তার দায়িত্ব পূর্ণ করেছে, আবার কেউ কেউ (শাহাদাত বরণের) প্রতীক্ষায় রয়েছে। তারা (প্রতিশ্রুতিতে) কোন পরিবর্তনই করেনি।(সূরা-আহযাব-২৩)
https://www.facebook.com/notes/sharif-abu-hayat-opu/%E0%A6%86%E0%A7%9F%E0%A6%B0%E0%A6%A8%E0%A6%BF/10152183048078319

Viewing all articles
Browse latest Browse all 358

Trending Articles