Quantcast
Channel: Truth Revealer
Viewing all articles
Browse latest Browse all 358

ডেইলি মেইল ও মিরর অনুসন্ধান- রেশমা উদ্ধার সাজানো

$
0
0
 রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে বহুল আলোচিত রেশমা উদ্ধার অভিযান ছিল সাজানো। এ কারখানা বিধ্বস্ত হয়ে হাজারের বেশি মানুষ নিহত হওয়ায় বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের লোভনীয় এ শিল্পের সুনাম ধরে রাখতে বাংলাদেশে মিথ্যা ‘অলৌকিক’ উদ্ধার অভিযানের কাহিনী সাজানো হয়। রেশমাকে উদ্ধারের মধ্য দিয়ে হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর কথা অনেকাংশে ভুলে গিয়েছে। গতকাল বৃটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা ডেইলি মিরর ও ডেইলি মেইলের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, রেশমাকে উদ্ধারের ঘটনা সাজানো (যড়ধী)। কারণ, রানা প্লাজা যেদিন ধসে পড়েছিল সেদিনই তিনি তার এক পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে এসেছিলেন। ওই দু’টি পত্রিকার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রেশমার সঙ্গে উদ্ধার হওয়া ওই পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে কথা হয়েছে ওই দুই পত্রিকার সাংবাদিকদের। তাদের তিনি জানিয়েছেন, এপ্রিলে ওই ৮ তলা ভবনটি ধসে পড়ার পর তিনি ও রেশমা এক সঙ্গে বেরিয়ে আসেন। তখন রেশমার সঙ্গে তিনি ছিলেন তৃতীয় তলায়। ওই পুরুষ সহকর্মী নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন নিরাপত্তার জন্য। তিনি বলেছেন, আমরা দু’জনেই একসঙ্গে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসি। তারপর একই হাসপাতালে ছিলাম দু’দিন। তারপর রেশমা হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যায়। এরপর তাকে আমি দেখতে পাই ঘটনার ১৭ দিন পর টেলিভিশনে। তখন বলা হচ্ছিল এটা একটি অলৌকিক ঘটনা। কিন্তু আসলে এটা একটি ডাহা মিথ্যা কাহিনী। এ ঘটনা অনুসন্ধানে সানডে মিরর তাদের প্রতিনিধি পাঠায় বাংলাদেশে। তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এতে তিনি বুঝতে পারেন এই উদ্ধার অভিযান সাজিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। এর কারণ, বাংলাদেশে রয়েছে বছরে ১০০ কোটি পাউন্ডের গার্মেন্ট ব্যবসা। রানা প্লাজা ধসের পর সেই ব্যবসায় বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে কর্তৃপক্ষ এমন ঘটনা সাজায়। মিরর বলেছে, গার্মেন্ট শ্রমিকরা তাদের কাছে প্রমাণ তুলে দিয়েছেন। পত্রিকা কর্তৃপক্ষ তাদের দেয়া বক্তব্যের রেকর্ডিং যাচাই করেছেন। তবে রেশমার যে সহকর্মী ওই তথ্য মিডিয়াকে দিয়েছেন তার বক্তব্য ঢাকায় সরকারবিরোধী পত্রিকা দৈনিক আমার দেশ-এর সাংবাদিকরা যাচাই করেছেন। রেশমার সঙ্গে বেঁচে যাওয়া ওই ব্যক্তি সাংবাদিকদের বলেছেন, রেশমা ঘটনার দিনই বেরিয়েছিলেন। তাকে কাছেই এনাম হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। রানা প্লাজার আশপাশের রাস্তায় যাদের দিন কাটে তারা বলেছেন, রহস্যময় ওই উদ্ধার অভিযানের আগে তাদেরকে সেখান থেকে উঠিয়ে দেয়া হয় জোর করে। কোন ব্যাখ্যা না দিয়ে তার পরের দিন তাদেরকে স্ব স্ব স্থানে ফেরার অনুমতি দেয়া হয়। একই সঙ্গে উদ্ধার অভিযানের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি না করতে ২৪ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এছাড়া রেশমার শারীরিক অবস্থা, তার পোশাকের অবস্থা দেখেও প্রশ্নের উদ্রেক হয়। মিরর লিখেছে, অনুসন্ধানী সাংবাদিক শিশির আবদুল্লাহ বলেছেন, রেশমা ১৭ দিন টনকে টন ওজনের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে ছিলেন। কিন্তু তাকে দেখে তেমন কোন চিহ্নই পাওয়া যায়নি। রেশমা বলেছেন, তিনি পানির জন্য এলোপাতাড়ি ছড়িয়ে থাকা মৃতদেহের ভেতরে ইট ও ধ্বংসস্তূপের ভেতর হামাগুড়ি দিয়েছেন। আঙ্গুল ও নখ দিয়ে পথ বের করেছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে তার হাতে ও নখে যে চিহ্ন থাকার কথা তা পাওয়া যায়নি। এছাড়া রেশমাকে যখন উদ্ধার করে বাইরে আনা হলো তখন তার চোখ ছিল পরিষ্কারভাবে খোলা। এত দিন অন্ধকারে আটকে থাকার পরও উজ্জ্বল সূর্যালোকে তাকে সংবেদনশীল মনে হয়নি। তিনি যে পোশাক পরেছিলেন তা ছেঁড়া বা ছিন্নভিন্ন দেখা যায়নি। বরং তা দেখা গেছে পরিষ্কার। এতে লোকজনের মধ্যে সন্দেহ বাড়তে থাকে। কিন্তু সরকার একে তুলে ধরে অলৌকিক ঘটনা হিসেবে। লোকজনকে এমনি এক প্রচারণার মধ্যে ডুবিয়ে রাখা হয়। সবাইকে বানানো হয় বোকা।
রেশমা অশিক্ষিত। তাকে কয়েকদিন আগে সরকার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হাজির করা হয়েছিল। ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে নতুন চাকরি দেয়া হয়েছে তাকে। এ চাকরিতে রেশমাকে বেতন দেয়া হচ্ছে মাসে ৬০০ পাউন্ড, যা গড় বেতনের ১০ গুণের সমান।
ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি ‘ধোঁকা’ প্রসঙ্গে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান। বলেন, আমি যেখানে ছিলাম আপনারা সেখানে ছিলেন না। তাই আপনাদের কোন ধারণা নেই। এ অবস্থায় কর্মকর্তারা তাকে আর প্রশ্ন করতে দেননি সাংবাদিকদের। বলা হয়েছে, রেশমাকে নতুন জীবনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। সে প্রস্তাব ফেলে তাকে দেয়া হয়েছে ওই হোটেলের চাকরি।
মিরর লিখেছে, রেশমা রাজধানী ঢাকা থেকে ৩০০ মাইল উত্তর-পশ্চিমে দিনাজপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম রানীগঞ্জে বেড়ে ওঠেন। আমরা শুক্রবার সেই গ্রামে যাই। সেখানে ছোট্ট এক রুমের মাটির ঘর। উপরে ছনের ছাউনি। এখানে রেশমার মা জোবেদাও তার মেয়ের উদ্ধার অভিযানকে ‘ধোঁকা’ বলে মানতে নারাজ। তিনি বলেন, সবাই জানে তার উদ্ধার অভিযান একটি অলৌকিক ঘটনা। এখন রেশমা নতুন একটি চাকরি পেয়েছে। এখন আমাদের সামনে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ। ভবন ধসের খবর শোনার পর আমরা ছিলাম উদ্বিগ্ন। স্বামীকে নিয়ে আমি ঢাকা চলে যাই। মেয়ের সংবাদের জন্য অপেক্ষায় থাকি অন্যদের মতো। রেশমাকে পেতে প্রার্থনা করতে থাকি।
১৭ দিন পর। ১০ই মে। এদিনও উদ্ধার অভিযান চলছিল। অপেক্ষায় থাকা পরিবারগুলোকে খবর জানাতে লাউড স্পিকারের মাধ্যমে একটি ঘোষণা দেয়া হলো। তাতে বলা হলো- এখনও একজন নারী জীবিত আছেন। তার নাম রেশমা।
জোবেদা বলেন, আমি এ কথা শুনে মূর্ছা গেলাম। যখন আমার চেতনা ফিরল তখন লোকজন আমাকে নিয়ে গেল একটি হাসপাতালে তাকে দেখতে। তখন সে সচেতন। আমাদের সঙ্গে কথা বলল। সে আমাদের বলল- সে খুশি। তার বাহুতে সামান্য দাগ আছে। সে ভাল আছে। আমার আনন্দের সীমা রইল না। আমি বিশ্বাস করতে পারলাম না যে, সে কত ভাগ্যবতী। তার দেখাশোনা করছিল সেনাবাহিনী। আরও সুস্থ হয়ে সে হাসপাতাল ছাড়ে এবং তাকে হোটেলে একটি নতুন চাকরি দেয়া হয়। সে আমাদের এখন অর্থ পাঠাবে। আমরা আশা করছি, বছরে আমাদের দেখতে দু’বার বাড়ি আসবে সে।
বস্তিতে বসবাসকারী এসব শ্রমিক যুক্তরাজ্যের প্রাইমার্ক ও বিশ্বের অন্যান্য স্টোরের জন্য দিনে এক পাউন্ডের বিনিময়ে কাজ করতেন। ২৪শে এপ্রিল ওই ভবন ধসে পড়ার আগে এর দেয়ালে ফাটলের বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু সম্পদশালী ওই কারখানার মালিক তা উপেক্ষা করে। সে অনুমতি না নিয়ে ওই ভবনের ওপরে অতিরিক্ত তিনটি ফ্লোর নির্মাণ করে। তাকে সহ আরও কয়েকজনকে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শাস্তি হিসেবে তাদের মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা এক জরিপ চালিয়ে এ মাসের শুরুর দিকে দেখেছেন যে, বাংলাদেশের তিন-পঞ্চমাংশ গার্মেন্ট কারখানা ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
মিরর লিখেছে, উদ্ধার অভিযান নিয়ে ‘ধোঁকাবাজি’র বিষয়ে আমরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেনেন্ট নুরে আলম সিদ্দিকীর কাছে জানতে চাই। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা কোন মন্তব্য করব না। 



Viewing all articles
Browse latest Browse all 358

Trending Articles