Quantcast
Channel: Truth Revealer
Viewing all articles
Browse latest Browse all 358

কেমন আছেন আল্লামা সাঈদী-২

$
0
0
07 Jun, 2013
[দুই]

কারাগারে আটক থাকা অবস্থায় হারালেন মা, পিতার ওপর জঘন্য মিথ্যাচার সহ্য করতে না পেরে ট্রাইব্যুনালেই হার্ট এ্যাটাক করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন তার জ্যেষ্ঠ পুত্র রাফীক বিন সাঈদী, ফাঁসির রায় ঘোষণার আগে দ্বিতীয় সন্তান শামীম সাঈদীকে গ্রেফতার করলো পুলিশ। জামিনে মুক্তি পেয়ে কারাগার থেকে বের হওয়া মাত্র আবারও গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হলো শামীম সাঈদীকে। ২য় বার জামিন পাওয়ার পর কারাগার থেকে বের হয়ে আসলে তাকে পুনরায় ভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেয়া হয়। সাঈদী পরিবারের ওপর চলছে জুলুম, নিপীড়ন। কারাভ্যন্তরের নির্জন কনডেম সেলে নিঃসঙ্গ একাকিত্ব বন্দী জীবন-যাপন করছেন তিনি নিজে। এসব যন্ত্রণাকাতর ও বেদনাদায়ক পরিস্থিতিতে বিশ্ব নন্দিত মুফাসসিরে কুরআন আল্লামা সাঈদী কেমন আছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে তার মামলা চূড়ান্ত শুনানির অপেক্ষায়। মামলার দিক নির্দেশনার জন্য আমরা তার সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশে গিয়েছিলাম ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। এ কারাগারের কনডেম সেলে আল্লামা সাঈদী বন্দী জীবন-যাপন করছেন। বিগত ৫০ বছরেরও বেশি সময় যাবত যিনি বিশ্বের অগণিত মানুষের নিকট কুরআনের আহ্বান পৌঁছিয়েছেন, যার তাফসির শুনে বহু সংখ্যক মানুষ আলোর পথের সন্ধান পেয়েছেন, যার বলিষ্ঠ কণ্ঠে উচ্চারিত কুরআনের মর্মস্পর্শী ও হৃদয়গ্রহী আলোচনা মানুষের অন্তরকে স্পর্শ করেছে, কিশোর, তরুণ, যুবক, বৃদ্ধসহ সর্বস্তরের মানুষ যার কণ্ঠে কুরআনের আহ্বান শুনে হয়েছেন উদ্দীপ্ত ও উজ্জীবিত, এ জালেম সরকার বিগত ৩ বছর যাবত তাকে কারাগারের লৌহ পিঞ্জিরে আবদ্ধ করে রেখেছে। মিথ্যা মামলা দায়ের করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাকে শাস্তির ব্যবস্থা করেছে সরকার। নিজের স্ত্রী, সন্তান, ¯েœহময়ী নাতি-নাতনিদের পরশ থেকে তাকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। ইসলামপ্রিয় অগণিত মানুষকে তাফসির শোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। কারাভ্যন্তরের অন্ধ প্রকোষ্ঠে থেকেও যিনি কুরআনের ময়দানে বিচরণ করেন, পথহারা মানুষকে আবারো আলোর সন্ধান দেয়ার জন্য যিনি উদগ্রীব তাকে বন্দী করে রাখা সম্ভব হলেও তার হৃদয় বিচরণ করছে অগণিত মানুষের মাঝে।

ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ঘোষিত রায়ের বিরুদ্ধে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে আল্লামা সাঈদীর পক্ষে আপিল করা হয়েছে। মামলার শুনানির জন্য তার দিক নির্দেশনার উদ্দেশে এর আগেও কারাভ্যন্তরে তার সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম। ২৫ মে এটা তার সাথে ২য় সাক্ষাৎ। এ সাক্ষাৎকারের সময় আমরা ৩ জন আইনজীবী উপস্থিত ছিলাম। অন্য দু’জন হলেন জনাব মনজুর আহমদ আনসারী ও জনাব এ এস এম কামাল উদ্দিন আহমদ।

এ সাক্ষাতের সময় তিনি শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ ছিলেন। শরীরে ছিল প্রচ- জ্বর। মাথা, পিঠ, কোমর ও হাঁটুতে প্রচ- ব্যথা। জ্বরে তিনি কাতরাচ্ছিলেন। তবুও মনের জোরে আমাদের সাথে কথা বলেছেন। মামলা পরিচালনার নির্দেশনা দিয়েছেন। সত্যের পক্ষে লড়াইয়ের জন্য আইনজীবীদের উৎসাহিত করেছেন। সংগঠনের নেতৃবৃন্দের খোঁজ খবর নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে সরকারি ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলন করে জীবন দিয়েছেন তাদের জন্য কাতর কণ্ঠে, বিনীতভাবে মহান প্রভুর দরবারে দোয়া করেছেন। সমবেদনা জানিয়েছেন। সাক্ষাৎকারের সময় তার প্রতিটি শব্দ, বাক্য আমাদেরকে উজ্জীবিত করেছে। দ্বীনের প্রতি তার জীবন উৎসর্গ করার তীব্র আকাক্সক্ষা আমাদেরকে উদ্বেলিত করেছে। ৪০ মিনিটের সাক্ষাৎকালে তিনি তার মনের অনেক অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন।

সাক্ষাৎকারের অনুমতি চেয়ে পূর্বেই যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হয়েছিল। আমরা নির্ধারিত সময়েই কারা ফটকে গিয়ে উপস্থিত হলাম। আল্লামা সাঈদীকে ডেপুটি জেলারের কক্ষে এনে আমাদেরকে সাক্ষাতের জন্য নিয়ে যাওয়া হলো। আমাদেরকে দেখামাত্রই “আসসালামু আলাইকুম” বলে তিনি উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেন। তার কণ্ঠে উচ্চারিত সালাম ডেপুটি জেলারের কক্ষে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল। তিনি দাঁড়াতে পারছিলেন না। প্রচ- জ্বরে তার শরীর কাঁপছিল। তার সাথে কোলাকুলি করার জন্য হাত ধরতেই তিনি উঠে দাঁড়ালেন। তার নাক দিয়ে গরম বাতাস প্রবাহিত হচ্ছিল। কোলাকুলির সময় সে উষ্ণ বাতাস আমার শরীরের পোশাক ভেদ করে গা স্পর্শ করলো। নাকের প্রবাহিত গরম বাতাসে আমি আশ্চর্য হলাম। জ্বরে তার গোটা শরীর পুড়ে যাচ্ছিল। একে একে আমাদের ৩ জনের সাথে কোলাকুলি করলেন। এরপর তার জন্য নির্ধারিত আসনে বসে তিনি কথা বলার চেষ্টা করলেন। তার ঠোঁট কাঁপছিল। শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও মনের জোরে তিনি এ কারাগারের নিভৃত কুঠরিতে বন্দী জীবনের নিঃসঙ্গ, একাকিত্বের কথা প্রকাশ করছিলেন।

তার এ অসুস্থ শরীর দেখে বার বার আমাদের হৃদয় হাহাকার করে উঠছিল। কুরআনের সম্মান, মর্যাদা রক্ষা ও কুরআনের সুমহান আদর্শ প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠার জন্য যিনি সারাবিশ্বে বিচরণ করেছেন আজ তাকে কারাগারে আটক রেখেছে এ জালেম সরকার। প্রচ- জ্বরের অবস্থায় যখন তার সেবা, পরিচর্যা ও খেদমতের প্রয়োজন- তখন তার পাশে আপনজন বলতে কেউ নেই। স্ত্রী-পুত্র, পুত্রবধূ, আদরের নাতি-নাতনী সকলেই তার সান্নিধ্য থেকে দূরে, অনেক দূরে। পিপাসায় তার কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছিল। তিনি এক গ্লাস পানি পান করতে চাইলেন। ডেপুটি জেলার তাকে এক গ্লাস পানি পান করতে দিলেন। তিনি তা তৃপ্তির সাথে পান করে “আলহামদুলিল্লাহ” পড়লেন। প্রচ- জ্বরে আক্রান্ত শরীরের জন্য প্রয়োজন ছিল শরবত পান করার। কিন্তু এই অন্ধ কারা প্রকোষ্ঠে সে চাহিদা পূরণ করার কোনো সুযোগ নেই। তার এই কষ্ট সম্পর্কে আমরা কিছু বলতে উদ্যত হলেই তিনি বললেন, “দুনিয়ায় অনেক নবী ও রাসূল দ্বীনের জন্য যে কষ্ট করেছেন সে তুলনায় আমার এ কষ্ট কিছুই নয়। তোমরা দোয়া করো আল্লাহ যেন আমার ধৈর্যশক্তি বাড়িয়ে দেন। ঈমানের এ পরীক্ষায় আল্লাহ যেন আমাকে উত্তীর্ণ হওয়ার তাওফিক দেন।”

তিনি জানতে চাইলেন তার মামলার অবস্থা। আমরা তার মামলা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিলাম। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে মামলার ‘সামারি’ জমা দেয়ার কথা তাকে অবহিত করা হলো। তিনি দৃঢ়কণ্ঠে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে উল্লেখ করে বললেন, “এসব অভিযোগের হাজার কোটি মাইলের মধ্যেও আমার কোন অবস্থান ছিল না।” তিনি যুক্তি দিয়ে সত্যকে তুলে ধরার জন্য আইনজীবীদের পরামর্শ দিলেন।

তার পক্ষে সাক্ষী দিতে এসে ৫ নবেম্বর, ১২ ট্রাইব্যুনালের ফটক থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা অপহৃত হন সুখরঞ্জন বালী। সাক্ষীকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ছিনিয়ে নেয়ার প্রতিবাদে সেদিন আইনজীবীগণ আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়ে ব্যর্থ হন। ঐদিন আইনজীবীগণ সাঈদীর পক্ষের সাক্ষীকে অপহরণ করার প্রতিবাদে আদালত বর্জন করেন। মাননীয় ট্রাইব্যুনাল আইনজীবীদের এই ভূমিকায় তাদের বিরুদ্ধে ‘কারণ দর্শানোর’ নোটিশ জারি করেন। একজন সাক্ষীকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হলো তার জন্য কিছুই করা হলো না আর প্রতিবাদে আইনজীবীরা আদালত বর্জন করায় ‘কারণ দর্শানোর’ নোটিশ পেলেন।

সেদিন থেকে সুখরঞ্জন বালীর কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। বালীর পরিবার আবেদন-নিবেদন করেও কোনো প্রতিকার পায়নি। অতি সম্প্রতি নিউ এইজ পত্রিকায় সুখরঞ্জন বালী ভারতের কারাগারে আটকের খবর প্রকাশিত হয়। এরপর প্রতিটি পত্রিকায় এ সংবাদ পরিবেশিত হয়। আল্লামা সাঈদী কারাগারে তার জন্য নির্ধারিত ইত্তেফাক পত্রিকা পড়ে সুখরঞ্জন বালীর ঘটনা জানতে পারেন। পত্রিকায় বালীর ঘটনা পড়ে তিনি বিস্মিত হন।

আমাদের সাথে সাক্ষাৎকারের সময় তিনি বললেন, “সুখরঞ্জন বালী তার জীবনকে মৃত্যুর সাথে বাজি রেখে আমার পক্ষে সাক্ষী দিতে এসেছিল। সে তার স্ত্রী, সন্তান, পরিবার, পরিজনের মায়া-মমতা ত্যাগ করে আমার জন্য ঝুঁকি নিয়েছিল। আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ। তাকে অপহরণের পর আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম। তার বেঁচে থাকার খবর শুনে আমি আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করেছি। আমি তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও মিডিয়ার প্রতি আহ্বান জানাই তার জীবনের নিরাপত্তা বিধানের জন্য। বালীকে সাক্ষ্য দিতে না দিয়ে সরকার আমার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র করেছিল তা জাতি জানতে পেরেছে। সে সত্য বলতে এসে মৃত্যুর মুখে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল। আপিল শুনানিকালে তার বিষয়ে আইনী দিক খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।”

আমরা তার সামগ্রিক অবস্থা জানতে চাইলে তিনি নিঃসঙ্গ, একাকিত্ব কারা জীবনের হৃদয় বিদারক দৃশ্যের কথাগুলো ব্যক্ত করলেন। তিনি জানালেন, তাকে যে সেলে রাখা হয়েছে তার পার্শ্বে আরো ৭টি কক্ষ। যেখানে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামীদের রাখা হয়। এখন ৭টি কক্ষই ফাঁকা। তিনি একটি কক্ষে অবস্থান করছেন যার আয়তন দু’টি কবরের সমতুল্য। তার সেল থেকে মাত্র ৫০ কদম দূরেই ফাঁসির মঞ্চ। এক ধরনের মানসিক যন্ত্রণার জন্যই ফাঁসির আসামীদের এভাবে রাখা হয়। কিন্তু আল্লামা সাঈদী বলেন, “আমি কোনো যন্ত্রণাই অনুভব করি না। কারণ আমার জীবন, মৃত্যু এবং বেঁচে থাকা সবকিছুই আল্লাহর জন্য।”

তিনি আরও বললেন, তার কক্ষের ফ্লোর এব্রো-থেব্রো এবং উঁচু-নিচু। এতে শুতে খুবই কষ্ট হয়। মাথায় দেয়ার জন্য তার কোন বালিশ নেই। বিছানার জন্য কোন উপযোগী বিছানাপত্র নেই। সেলের ভেতরে টয়লেটটি এমন জায়গায় যেটিকে সামনে রেখে নামায আদায় করতে হয়। এই পরিবেশে নামায আদায়ে তার কষ্ট হচ্ছে। মহান আল্লাহকে এ পরিবেশে সিজদা করতে হৃদয়ে এক অস্বস্তিকর বেদনা অনুভব করি। তিনি আরও জানালেন, অধিকাংশ সময় কুরআন তিলাওয়াত ও তাফসির গ্রন্থ পড়ে সময় কাটে তার। দেশ ও জাতির জন্য এবং ইসলামপ্রিয় মানুষের মুক্তির জন্য মহান আল্লাহর দরবারে চোখের পানি ফেলে দোয়া করেন। এভাবেই ফাঁসির সেলে তার ৮৬তম দিন অতিবাহিত হলো (২৫ মে পর্যন্ত)।

তার পরিবারের প্রসঙ্গ আসলে তিনি বললেন, ‘প্রত্যেক সন্তানই আল্লাহর নেয়ামত। আমার বড় ছেলে রাফীক বিন সাঈদী ছিল এক রতœ। আমি তার মুখেই প্রথম আব্বু ডাক শুনেছিলাম। তাকে আমি একজন মুফাসসিরে কুরআন হিসাবে তৈরি করেছিলাম। আমার প্রত্যাশা ছিল মৃত্যুর পর সেই আমার জানাযা পড়াবে। কিন্তু আল্লাহতায়ালা তাকে আমার আগেই উঠিয়ে নিলেন। আমার দ্বিতীয় ছেলে শামীম সাঈদী অত্যন্ত শান্ত-শিষ্ট, ভদ্র ও নিরীহ। সে কখনো কাউকে শক্ত কথা বলতে শেখেনি। তাকে কারাগারে আটক রেখে সরকার তার ওপর চরম জুলুম করছে। তার ছোট্ট ছোট্ট সন্তানগুলোকে পিতার ¯েœহ থেকে বঞ্চিত করেছে। এটা আমার জন্য আরেকটি বেদনা।”

তৃতীয় ছেলে মাসুদ সাঈদীর কথা বলতেই তিনি আবেগাল্পুত হয়ে পড়লেন। তিনি বললেন, “সন্তান পিতা-মাতার কাছে চিরদিন ঋণী থাকে। কোন সন্তানই বাবা-মায়ের হক আদায় করে শেষ করতে পারবে না। কিন্তু আমার মনে হয় মাসুদ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। আমি ভাবি আমি আমার সন্তান মাসুদের নিকট ঋণী হয়ে যাচ্ছি। সে আমার জন্য যা করেছে তা কোনো সন্তান তার পিতার জন্য করতে পারে না। আমি তার প্রতি সন্তুষ্ট। দোয়া করছি আল্লাহও যেন তার প্রতি সন্তুষ্ট হন। মাঝে মাঝেই সে কারাগারের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকতো। আমি শুনতাম মাসুদ কারাগারের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। সে আসতো এই কথা মনে করে যে, হয়তো আব্বার সাথে সাক্ষাৎ হবে।” তিনি তার সর্ব কনিষ্ঠ সন্তান নাসিম সাঈদীর কথাও বললেন। নিতান্তই শান্ত গোছের এই ছেলেটি ও তার পরিবারের জন্য নিয়মিত দোয়া করছেন বলে জানালেন।

আমরা তার শারীরিক অবস্থা ও সামগ্রিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করলে তিনি হযরত খুবাইব (রাঃ)-এর উদাহরণ দিয়ে বললেন, “হযরত খুবাইব ইবনে আদি (রাঃ)কে হত্যার উদ্দেশে আঘাত করতে করতে শূলীকাষ্ঠে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তিনি দু-রাকা’আত নামায আদায়ের জন্য তাদের কাছে সময় চেয়েছিলেন। সংক্ষিপ্তভাবে দু-রাকা’আত নামায আদায় করে তিনি বলেছিলেন- নামায দীর্ঘ করলে তোমরা বলবে আমি মরণ ভয়ে নামায দীর্ঘ করছি। সংক্ষিপ্ত দু-রাকা’আত নামায শেষ করে তিনি বধ্যভূমির দিকে যাত্রা করেন। তাকে হত্যার জন্য মক্কার হারাম শরীফের অদূরে ‘তানঈম’ নামক স্থানে একটি গাছে শূলীকাঠ ঝুলানো হয়েছিল। সেই গাছটির নিকট যখন তিনি পৌঁছলেন তখন বললেন- আমি যদি মুসলমান অবস্থায় নিহত হই তাহলে আমার মৃত দেহ কোন পার্শ্বে পড়ে থাকবে সে ব্যাপারে আমার কোনো পরোয়া নেই। এ যা কিছু হচ্ছে সবই আল্লাহর পবিত্র সত্তার প্রেমের পথে। তিনি ইচ্ছা করলে আমার খ- বিখ- দেহের ওপরেও করুণা বর্ষণ করেতে পারেন। হযরত খুবাইবকে শূলীতে ঝুঁলিয়ে বল্লম দ্বারা বিদ্ধ করা হয়েছিল। তার শরীর থেকে কাফের মুশরিকরা হাত এবং পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল। তার সে শাহাদাত ইসলামের ইতিহাসে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা।”

আল্লামা সাঈদী বললেন, “আল্লাহ যদি আমাকে তার প্রিয় বান্দা হিসাবে কবুল করেন, সেটাই হবে আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ পাওয়া। আল্লাহ যদি আমাকে শহীদী মৃত্যু দেন তাহলে আমার শরীরের পরিস্থিতি কি, কিংবা কোন অবস্থায় আমার মৃত্যু হবে তা আমি ভাবি না। আমি দেশবাসীর নিকট দোয়া চাই। যাতে আল্লাহ আমাকে উত্তম ধৈর্যধারণের এবং ঈমানের অগ্নি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার তাওফিক দেন।”

আল্লামা সাঈদী দেশবাসীর নিকট তার সালাম পৌঁছে দেয়ার জন্য আমাদেরকে অনুরোধ করেন।

ইতোমধ্যেই আমাদের সাক্ষাৎকারের জন্য বরাদ্দকৃত সময় শেষ হয়ে গেছে। জেল কর্তৃপক্ষ তাগিদ দিলেন কথা শেষ করতে। আল্লামা সাঈদী উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেন, আমার হাতে ভর দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। তিনি আমার হাত ধরে প্রধান ফটকের মধ্যবর্তী স্থানটুকুতে এসে পৌঁছলেন। ডানদিকের গেট দিয়ে তাকে ভেতরে প্রবেশ করতে হবে, বামের গেট দিয়ে আমাদের বের হতে হবে। আমরা পূর্বমুখী হয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় তার নিকট থেকে বিদায় নিলাম। একজন কর্তব্যরত প্রহরীর হাতে ভর দিয়ে আল্লামা সাঈদী ভেতরে ঢুকে গেলেন।

আমরা বের হয়ে আসার সময় মনে পড়লো ইতিহাসের নীরব সাক্ষী এ কারাগার। আজ এক কুরআন সৈনিককে এখানে আটক রাখা হয়েছে। যিনি অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে নিজের কণ্ঠে কুরআনের আওয়াজ উচ্চারণ করেছেন, সেই কণ্ঠনালীতে ফাঁসির দড়ি লাগিয়ে তার মৃত্যু কার্যকরের আদেশ দেয়া হয়েছে। অন্তরে এক সীমাহীন শক্তি অনুভব করলাম কুরআনের সে আয়াত স্মরণ করে, “সত্য সমাগত, মিথ্যা অপস্মৃত, সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী।” আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সত্যের বিজয় হবে এবং আল্লামা সাঈদী আবারো কুরআনের ময়দানে ফিরে আসবেন ইনশাআল্লাহ। লেখকঃ মতিউর রহমান আকন্দ 

Viewing all articles
Browse latest Browse all 358

Trending Articles