Quantcast
Channel: Truth Revealer
Viewing all articles
Browse latest Browse all 358

পিডিবির তার সরবরাহে ভয়াবহ জালিয়াতি..৩৯ কোটি টাকায় ৩৬ শ’ খালি ড্রাম!

$
0
0
প্রতি ড্রামে বৈদ্যুতিক তার থাকার কথা এক হাজার ৭০০ মিটার। কর্মকর্তারা যে ক’টি ড্রাম খুলে পরিমাপ করেছেন সেগুলোর প্রত্যেকটিতে পেয়েছেন মাত্র ৪০০ মিটার। অর্থাৎ প্রতি ড্রামে এক হাজর ৩০০ মিটার তার কম পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় একটির পর একটি ড্রাম যতই মাপছিলেন ততই গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল ইন্সপেকশন টিমের সদস্যদের। এত বড় দুর্নীতি দেখে তারাই হতভম্ব হয়ে যান। তারা একপর্যায়ে ড্রাম খোলা বা মাপা বন্ধ করে দিয়ে বাকিগুলো নেড়েচেড়ে ওজন অনুমান করার চেষ্টা করেছেন। এতে ড্রামের গঠন ও ওজন আন্দাজ করে তাদের আশঙ্কা সব ড্রাম খোলা হলে হয়তো কোনো কোনোটিতে আরো কম এমনকি খালিও পাওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগে নজিরবিহীন এই ঘটনায় আঁতকে ওঠেন সংশ্লিষ্ট পরিদর্শক দলের সদস্যরা। এ ঘটনায় প্রভাবশালী মহল জড়িত থাকতে পারে, এ আশঙ্কায় পরিদর্শক দলের সদস্যরা ভয়ে তদন্তকাজ অসমাপ্ত রেখেই ঢাকায় ফিরে যান। 
গত ১০ আগস্ট বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) টঙ্গীর কেন্দ্রীয় ভাণ্ডারে ঘটেছে ভয়াবহ এ জালিয়াতির ঘটনা। ভাণ্ডারে গত জুন মাসে ১১০ ট্রাকে তিন হাজার ৬৩০ ড্রাম বৈদ্যুতিক অ্যালুমিনিয়াম তার সরবরাহ করে সরকারি দলের একজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্যের মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। পরিদর্শক দলের তদন্তে পুকুর চুরি ধরা পড়ায় তারা বর্তমানে চাপের মধ্যে রয়েছেন ও একই সাথে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে জোর চেষ্টা চলছে বলেও জানা গেছে।


বিপিডিবি সূত্রে জানা গেছে, বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চল নিয়ে গঠিত ‘সেন্ট্রাল জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন প্রজেক্ট’-এর জন্য ৪৩ লাখ ৯৭ হাজার ৯৫২ দশমিক ৭২ ইউএস ডলার বা প্রায় ৩৯ কোটি টাকার বৈদ্যুতিক অ্যালুমিনিয়াম তার সরবরাহের কার্যাদেশ (নম্বর- ঢ়ফ/পুঢ়ফঢ়/নঢ়ফন/ঢ়শম-১৭/৬৮১, ফধঃব- ২২-১২-২০১৩) পায় ভিয়েতনামের এল এস ভিনা ক্যাবল অ্যান্ড সিস্টেম নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ভিয়েতনাম থেকে এসব মাল শিপমেন্ট হওয়ার আগেই নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কা না করেই কার্যাদেশপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে ৯০ ভাগ বিল পরিশোধ করে পিডিবির সেন্ট্রাল জোন কর্তৃপ। অ্যালুমিনিয়াম তার প্রস্তুতকারক এল এস ভিনা তাদের বাংলাদেশের এজেন্ট এসকিউ গ্র“পের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান টেকনো ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেডের মাধ্যমে তারগুলো গত জুনে পিডিবির টঙ্গীর কেন্দ্রীয় ভাণ্ডারে হস্তান্তরের মাধ্যমে রিসিভ (গ্রহণ) প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। যে তার পাঠানো হয়েছে তার মূল্য মাত্র ৯ কোটি টাকা। তারা বাকি ১০ ভাগ বিলও উত্তোলনের জন্য পরিদর্শক দলের প্রতিবেদনের (ইন্সপেকশন রিপোর্ট) অপোয় ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে পুকুর চুরি ফাঁস হয়ে ‘আরঅ্যান্ডআই’ (রিসিভ অ্যান্ড ইন্সপেকশন) প্রক্রিয়া আটকে যাওয়ায় অবশিষ্ট বিল উত্তোলন করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। প্রাথমিক তদন্তে পিডিবি যে পরিমাণ (এক-চতুর্থাংশের চেয়েও কম) মাল পেয়েছে তার মূল্য অবশিষ্ট ১০ ভাগ টাকার চেয়েও কম। আর যে পরিমাণের বিল পরিশোধ করা হয়েছে সেই পরিমাণ মাল পিডিবির ভাণ্ডারে আসেনি। এ অবস্থায় বিদেশী কোম্পানির কাছ থেকে কার্যাদেশ অনুযায়ী বাকি মাল আদায় করা অথবা টাকা ফেরত আনার বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপরে গ্রিন সিগনাল ছাড়া এ ধরনের পুকুর চুরি সম্ভব নয় বলে সূত্র দাবি করে আরো জানিয়েছে, ইন্সপেকশন টিমের কার্যক্রম শুরুর আগ পর্যন্ত ভাণ্ডারের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা এ বিষয়ে রহস্যজনক গোপনীয়তা অবলম্বন করেন। 
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে পিডিবির টঙ্গীর কেন্দ্রীয় ভাণ্ডারের উপপরিচালক পান্না কুমার ঘোষের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি গোপনীয়তা অবলম্বনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মালামাল রিসিভ করার দায়িত্ব আমাদের। আর মালামালের গুণগত মান ও পরিমাণ ঠিক আছে কি না তা দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ইন্সপেকশন টিমের। তারের ড্রাম খোলা না ইনটেক অথবা কম না বেশি এগুলো দেখার দায়িত্বও ভাণ্ডার কর্মকর্তাদের নয় বলেও তিনি দাবি করেন। পিডিবির কেন্দ্রীয় ভাণ্ডারগুলো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পরিদফতরের অধীনে পরিচালিত। বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পরিদফতরের পরিচালক এ জে এম লুৎফর রব্বানীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আলোচিত ঘটনাটি তাকে ভাণ্ডারের প থেকে জানানো হয়নি। মালগুলো ভাণ্ডারে রিসিভ করার দেড় মাস পর ইন্সপেকশন টিমের সদস্যরা প্রতি ড্রামে এক হাজার ৭০০ মিটারের স্থলে ৪০০ মিটার তার পাওয়ার বিষয়টি তাকে অবহিত করেছেন। তিনি বলেন, ইন্সপেকশন টিমের মাপে যাতে কম ধরা না পড়ে সেজন্য ঠিকাদারেরা এমনিতেই প্রতি ড্রামে দুই-তিন ফুট তার বেশি দিয়ে থাকেন। কারণ ইন্সপেকশন টিম সব মাল পরিমাপ করেন না। তারা প্রথম পাঁচ-ছয়টি ড্রাম মেপে যে পরিমাণ তার পান সেই পরিমাণেই সরবরাহকৃত সব তারের বিল নির্ধারণ করা হয়। এ দিকে এ ব্যাপারে পাঁচ সদস্যের ইন্সপেকশন টিমের প্রধান সেন্ট্রাল জোন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল বাসিতের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও প্রকল্প পরিচালকের অনুমতি ছাড়া কথা বলতে অস্বীকার করেন। এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো: মাহবুবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি ভিয়েতনামের এল এস ভিনা কর্তৃপকে অবহিত করা হয়েছে। তাদের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে মালগুলো পুনরায় পরীা-নিরীা করা হবে। তবে কবে নাগাদ বিদেশী প্রতিনিধিরা আসবেন এ ব্যাপারে এখনো পিডিবিকে জানানো হয়নি বলেও তিনি জানান। পিডি আরো বলেন, যেহেতু আরঅ্যান্ডআই হয় নাই, সেহেতু এই মাল এখনো আমাদের মাল হিসেবে গণ্য হবে না। মাল বুঝে না পেলেও ইতোমধ্যে ৯০ ভাগ বিল পরিশোধের বৈধতার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্পটি যেহেতু জাইকার অর্থায়নে পরিচালিত সেহেতু জাইকার নিয়ম অনুযায়ীই বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এখানে পিপিআর (সরকারি ক্রয়নীতিমালা) প্রযোজ্য নয়। বিদেশী কোম্পানি ধরা না দিলে কিভাবে ধরবেন এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি পুরো মাল আদায় করেই ছাড়ব। সে ধরনের ডিড ডকুমেন্ট ও জামানত আছে বলেও তিনি দাবি করেন। এ সময় তিনি একটি ডিডের কপিও প্রদর্শন করেন। যাতে এল এস ভিনার পে তাদের এজেন্ট টেকনো ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেডের পরিচালক (টেকনিক্যাল) নাফিজা ইসলামের স্বার রয়েছে। টেকনো ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেড এসকিউ গ্র“পের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। এর প্রধান অফিস ঢাকার বনানী সি ব্লকের ১৭ নম্বর রোডের ২১ নম্বর বাড়ি ‘বাসতি হরিজন’ টাওয়ারের ১২তম তলায়। এ ব্যাপারে টেকনো ইলেকট্রিক্যালসের মহাব্যবস্থাপক ওয়াসিম চৌধুরীর সাথে নয়া দিগন্তের সাংবাদিক পরিচয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই বিষয়ে এ মুহূর্তে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন ও অন্য সময় অফিসে যেতে অনুরোধ জানান।
পিডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এক হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলে পাঁচ বছরমেয়াদি বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্প ‘সেন্ট্রাল জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন প্রজেক্ট’-এর কাজ শুরু হয় ২০১০ সালের ২৩ মার্চ। আগামী বছর জুনে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। বৈদ্যুতিক তার ক্রয়ে আলোচিত জটিলতার কারণে যথাসময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রকল্প ব্যয়ের এক হাজার ৪৩৯ কোটি টাকার মধ্যে দেশীয় অর্থ রয়েছে ৪৩৯ কোটি টাকা। বাকি পুরো টাকাই জাপানভিত্তিক দাতা সংস্থা ‘জাপান ইন্টারন্যশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি’র (জাইকা)। প্রকল্পটির একটি বড় অংশ বৈদ্যুতিক তার ক্রয়ের েেত্র পুকুর চুরি ধরা পড়ায় এর অন্যান্য দিক বাস্তবায়নের েেত্রও কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখারও দাবি উঠেছে।
http://www.dailynayadiganta.com/details.php?nayadiganta=Njc4OTM%3D&s=MQ%3D%3D

Viewing all articles
Browse latest Browse all 358

Trending Articles