Quantcast
Channel: Truth Revealer
Viewing all articles
Browse latest Browse all 358

কোটি টাকা ভাগাভাগির অভিযোগ

$
0
0
যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার রায়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের নেতারা কোটি কোটি টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। প্রায় দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করা হয়েছে মঞ্চের নামে। শুধু তাই নয়, চাঁদাবাজির পর চাপে পড়ে কমপক্ষে ২০টি প্রতিষ্ঠানের টাকা ফেরতও দেয়া হয়েছে। মঞ্চের নামে বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও অস্বচ্ছতার প্রতিবাদ জানিয়ে আন্দোলনের এক পর্যায়ে নোট অব ডিসেন্ট দেয় ছাত্র ফেডারেশন। অভিযোগ রয়েছে মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দিয়েছেন ইতিমধ্যে। নিজেও দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন। আর আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা তার কাছে হিসাব চাইছেন। শুধু ডা. ইমরান এইচ সরকারই নয় আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত আরও বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা জড়িত রয়েছেন চাঁদাবাজিতে। তারা এখন হিসাব দিচ্ছেন না। এর মধ্যে কয়েকজন সাবেক ছাত্রনেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বও রয়েছেন। গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের ওপর শুক্রবার পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার পর বিষয়টি জোরালোভাবে সামনে এসেছে। গণজাগরণ মঞ্চ পর্দার অন্তরালে বিভিন্ন স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠন থেকেও টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রলীগ নেতারা।


 এর আগে একই ধরনের অভিযোগ করেন গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম রূপকার শহীদুল হক। টাকার ভাগাভাগি নিয়ে হচ্ছে মিটিংয়ের পর মিটিং। ছাত্রনেতারা মনে করছেন ডা. ইমরান এইচ সরকারের পকেটে বেশি টাকা চলে গেছে। বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার ও শনিবার কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। মঞ্চের নামে আদায় করা টাকা কোথায় এবং কত টাকা আয় হয়েছে তার হিসাব চাইছেন ছাত্রনেতারা। এছাড়া, এত ঝামেলা কেন হচ্ছে তা-ও জানতে চাইছেন তারা। বিষয়টি স্বীকার করেছেন মঞ্চের অন্যতম নেতা ও ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তা আবার ফেরত দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন আরেকজন ছাত্রনেতা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, এয়ারলাইন্স, হাসপাতাল ও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ  থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা। শীর্ষ নেতাদের বিলাসী জীবন, পাঁচ তারকা হোটেলে মাসের পর মাস অবস্থান, নতুন নতুন জামা-কাপড়, উচ্চ দামের মোবাইল ফোন প্রভৃতির ব্যবহার দেখে অন্যরা শুরুতেই ক্ষিপ্ত ছিল। কিন্তু ভয়ে কিছু বলেনি। মঞ্চের নেতাকর্মীদের নামে চাঁদাবাজির বিষয়টি স্বীকার করেছেন মঞ্চ চলাকালীন সাইবার হামলা প্রতিরোধ আন্দোলনের অন্যতম নেতা শেখ আসলাম। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান শুরুতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে টাকা দিলেও পরে দিতে অস্বীকার করলে তাদের প্রতিষ্ঠান ‘রাজাকার’ নিয়ন্ত্রিত ও সেই তালিকা শাহবাগে টাঙিয়ে দেয়ারও হুমকি দেয়া হয়। শাহবাগে অবশ্য বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের তালিকা টাঙানো হয়েছিল যার বেশির ভাগই জামায়াত নিয়ন্ত্রিত। 

সূত্র জানায়, একটি বেসরকারি ব্যাংক ১ কোটি টাকা দেয় আন্দোলন চালাতে। ওই ব্যাংকের পক্ষে স্লোগানও দেয়া হতো মঞ্চ থেকে। এক প্রকার জিম্মি করে একটি এয়ারলাইন্স থেকে ৪০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রলীগের সাবেক ক্যাডারদের দ্বারা দখলকৃত একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ও মোটা অঙ্কের টাকা দেয়। ওই বিশ্ববিদ্যালয়টির নামে লেখা ব্যানার ‘পক্ষ নিলে রক্ষা নাই, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই’ শীর্ষক লেখা এখনও ঝুলছে রাজধানীর অলিতে-গলিতে। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচারাধীন জামায়াত নেতার নিয়ন্ত্রিত একটি ব্যাংক থেকে প্রথম দিকে এককালীন নেয়া হয় ১০ লাখ টাকা। পরে প্রতি মাসেই নির্ধারিত অঙ্কের টাকা নেন ইমরান এইচ সরকার। এছাড়া, অসংখ্য প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজি করছে মঞ্চের নেতাকর্মীরা। শুরুতে ছাত্রলীগ আন্দোলন ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকলেও পরে কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে সরে পড়ে। এরপর ইমরান ও বিভিন্ন বাম সংগঠনের নেতারা চাঁদাবাজির পথ প্রসারিত করে। এছাড়া শাহবাগ এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। শাহবাগের গণ্ডি পেরিয়ে আজিজ সুপার মার্কেট এলাকাতেও চাঁদাবাজির চোখ প্রসারিত করেছেন ইমরান ও অন্যরা। এসব এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে ছাত্রলীগ। এনিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগ ও মঞ্চের নেতারা। আগামী ১লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে চারুকলার সামনে মঞ্চ বানিয়ে চাঁদাবাজির নতুন রূপরেখা আঁটেন ইমরান। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় ছাত্রলীগ। এ নিয়ে মঞ্চের কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। 

কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে চাঁদাবাজির টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন মঞ্চের অন্যতম রূপকার ও ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত মল্লিক। ২০১৩ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি গড়ে উঠেছিল গণজাগরণ মঞ্চ। প্রথমদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে হাজার হাজার মানুষ মঞ্চের দাবির সঙ্গে ঐকমত্য প্রকাশ করে। দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিতর্কিত হতে থাকে গণজাগরণ মঞ্চ। বিশেষ করে মঞ্চের  মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারসহ শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে। চাঁদাবাজির ভাগের টাকা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের পকেটে গেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, বাম ঘরানার কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধেও রয়েছে একই অভিযোগ। গণজাগরণ মঞ্চের নেতাদের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজির বোমা ফাটান মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ শহীদুল হক ওরফে ‘মামা’। মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘মামা বাহিনী’র প্রধান কমান্ডার ছিলেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল হক গত সেপ্টেম্বরে ডা. ইমরান এইচ সরকারসহ অন্যদের বিরুদ্ধে কোটিপতি হওয়ার সরাসরি অভিযোগ করেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বলেন, গণজাগরণ মঞ্চ পর্দার অন্তরালে বিভিন্ন স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠন থেকে টাকা নিচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। এই কারণেই তারা আজ জনগণের মঞ্চ থেকে বিচ্ছিন্ন। ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত মল্লিক মানবজমিনকে বলেন, যে চেতনা নিয়ে মঞ্চ তৈরি হয়েছিল কিছুদিন পরই তা থেকে সরে আসে। শীর্ষ নেতাদের অস্বচ্ছতা ও জবাবদিহিই এ জন্য দায়ী। সাধারণ মানুষও মঞ্চ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। অস্বচ্ছতার প্রতিবাদ জানিয়ে এক পর্যায়ে আমরা নোট অব ডিসেন্ট দেই। তিনি বলেন, ১৫ থেকে ২০টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেয়া টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। সৈকত মল্লিক বলেন, কে বা কারা কোথা থেকে টাকা আনলো তার হিসাব ছিল না। ছিল না জবাবদিহি। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু অসংগতি দূর হয়নি। বর্তমানে যে ঝামেলা চলছে তার মূলে রয়েছে অস্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব। গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত চারুকলার ছাত্র শেখ আসমান বলেন, বিভিন্ন অনলাইন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে গণজাগরণ মঞ্চের নামে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি হচ্ছে। টাকার ভাগাভাগি নিয়ে নাকি আপনারা দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি আন্দোলন করেছি রাজাকারদের বিচারের জন্য। টাকা-পয়সার বিষয়ে আমি জানি না। মঞ্চের অন্যতম রূপকার বাপ্পাদিত্য বসু মানবজমিনকে বলেন, মঞ্চের নেতাকর্মীদের ভেতরে ভেতরে নানা ঝামেলা হচ্ছে। তা মিটমাট করতে কয়েকবার বৈঠক হয়েছে।  কোটি কোটি টাকা ভাগাভাগি বিষয়ে তিনি বলেন, টাকা-পয়সার বিষয়ে আমরা জানি না। সব নিয়ন্ত্রণ করছে ডা. ইমরান এইচ সরকার। আপনারা তার হাতে সব টাকা-পয়সার ভার কেন দিতে গেলেন- জানতে চাইলে বাপ্পাদিত্য বসু বলেন, সব বিষয় নিয়েই বৈঠক হচ্ছে। আমরা টাকা-পয়সার সঙ্গে জড়িত নই।

 উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ১৩ই জুলাই একটি মামলায় কাদের  মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই বছরের ২রা আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তদন্ত শুরু হয় ওই বছরের ২১শে জুলাই। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন  শেষে গত বছরের ৫ই ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন ট্রাইব্যুনাল-২। কাদের মোল্লার রায়কে কেন্দ্র করে গত বছরের ৫ই ফেব্রুয়ারি ‘ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভেটিস্ট নেটওয়ার্ক’ নামে আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের কারণে এক প্রকার বাধ্য হয়ে সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিটি) আইন সংশোধন করতে বাধ্য হয়েছিল। ২০১৩ সালের ১৭ই  ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) সংশোধন বিল, ২০১৩ জাতীয় সংসদে পাস হয়। আগের আইনে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ ছিল না। গতবছরের ১১ই ডিসেম্বর কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়।

http://mzamin.com/details.php?mzamin=MTgyMjA%3D&sMg=%3D#.U0G3Pk7XIo4.facebook

Viewing all articles
Browse latest Browse all 358

Trending Articles