Quantcast
Channel: Truth Revealer
Viewing all articles
Browse latest Browse all 358

পটুয়াখালীতে হিন্দু ব্যবসায়ীদের আ’লীগ নেতার মারধর ও দোকান ভাঙচুর...হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক; কয়েক স্থানে মন্দিরে অগ্নিসংযোগ

$
0
0
তিন দিন ধরে এক দিকে পটুয়াখালী শহরসহ জেলার সর্বত্র সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সমাবেশ অব্যাহত অন্য দিকে শহরতলী লাউকাঠি বাজারে তিনজন হিন্দু ব্যবসায়ীকে মারধর ও দোকানপাটে হামলা ভাঙচুর করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির নেতৃত্বে একদল ক্যাডার। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছেন জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দ। গত শনিবার রাতের এ ঘটনার পর স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ফটিক লাল চন্দ্র জানান, লাউকাঠি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বাহাদুর শেখের দাবিকৃত এক প্যাকেট সিগারেট ও ৫০০ টাকা না দেয়ায় শনিবার রাত ১০টার দিকে তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে ফটিক লালের দোকান ভাঙচুর করে ও তাকে মারধর করে। এ সময় তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে সঞ্জয় ও অজয় ব্যানার্জি নামে অপর দুই ব্যবসায়ীকেও মারধর করে এবং তাদের দোকান ভাঙচুর করে। ফটিক লালের স্ত্রী কাজল রানী জানান, এ ঘটনার পর ওই রাতেই তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে অভিযুক্তরা এ ঘটনা কাউকে না জানানোর জন্য বলে। আহত সঞ্জয়, অজয় ও এলাকাবাসী জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি বাহাদুর শেখ শহরসংলগ্ন লাউকাঠি বাজারের ফটিকের চায়ের দোকানে এসে সিগারেট চান। আগের বাকি টাকা পাওনা আছে দাবি করে সিগারেট দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন ফটিক। এতে রেগে গিয়ে বিস্কুটের কৌটা ছুড়ে মারে ফটিকের শরীরে। ফটিক এর প্রতিবাদ করায় দোকানে থাকা কৌটাগুলো ছুড়ে ফেলে এবং চায়ের কেটলি লাথি মেরে ফেলে দিয়ে দোকানে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। ঘটনার পর বাজারের পূর্ব পাশে মুদি দোকানি স্থানীয় বাসিন্দা অজয় চ্যাটার্জির দোকানে গিয়ে পূর্ববিরোধের জের ধরে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করে বাহাদুর। এ সময় অজয়ের বড় ভাই সঞ্জয় চ্যাটার্জি এর প্রতিবাদ করলে বাহাদুর তাকে কিলঘুষি ও লাথি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। এ সময় বাহাদুরের সাথে তার লোকজন ছিল। 
এ ব্যাপারে লাউকাঠি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আশিষ চক্রবর্তী বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি এখন কোর্টে আছি। পরে কথা বলব।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, অভিযুক্ত বাহাদুর আত্মগোপন করেছে। তাকে হন্য হয়ে পুলিশ খুঁজছে। দ্রুত তাকে গ্রেফতার সম্ভব হবে। 
পুলিশ সুপার রফিকুল হাসান গণি বলেন, একটু মদ টদ খেয়ে মাতলামি করেছে। পুলিশ ওকে ধরার চেষ্টা করছে। ওকে ধরে এনে একটু পিটা দিলেই ঠিক হয়ে যাবে।
বেলা ২টার দিকে জেলা প্রশাসক অমিতাভ সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মাত্র শুনলাম, খোঁজ নিয়ে দেখছি।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য স্বপন ব্যানার্জি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, এটা দুর্বৃত্তদের কাজ। আমরা বিােভ সমাবেশ করে অভিযুক্তদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছি। 
ভাণ্ডারিয়ায় মন্দিরে আগুন
পিরোজপুর ও ভাণ্ডারিয়া সংবাদদাতা জানান, জেলার ভাণ্ডারিয়া উপজেলার ইকড়ি ইউনিয়নের পশ্চিম পশারীবুনিয়া (মাদার্শী) গ্রামের একটি দুর্গামন্দিরে শনিবার দিবাগত রাতে কে বা কারা অগ্নিসংযোগ করে। তবে মন্দিরটিতে কোনো মূর্তি ছিল না। রাত সাড়ে ১১টার দিকে মন্দিরের নিকটবর্তী বাসিন্দা ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি দুলালচন্দ্র মিস্ত্রীর স্ত্রী লাবণি রানী মন্দিরে আগুন দেখতে পেয়ে তার স্বামীকে ঘুম থেকে জাগান।
তাদের ডাক-চিৎকারে এলাকাবাসী এসে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। যেনতেনভাবে তৈরি টিনের ছাউনির এ মন্দিরটিতে বছরে একবার পূজা হয়ে থাকে। গত পূজার পর মূর্তিগুলোকে বিসর্জন দিয়ে ঘরটিকে খালি রাখা হয়েছে বলে মন্দির কমিটির সভাপতি কেশব মিস্ত্রী জানিয়েছেন। মন্দির থেকে ২০০ গজ দূরত্বে এই কেশব মিস্ত্রির বাড়ি। তিনি জানিয়েছেন, আগুনের সংবাদ পেয়ে এখানে আসি। মন্দিরের নিকটবর্তী আরেক বাসিন্দা মন্দির কমিটির সদস্য পল্লীচিকিৎসক দিলীপ হালদার জানিয়েছেন, দুর্বৃত্তরা শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘিœত করার জন্য এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, জমিসংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে একটি পকে ফাঁসানোর জন্যই এ কাজ করা হয়েছে। পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। 
কয়েকটি স্থানে হিন্দু মন্দিরে অগ্নিসংযোগ 
এদিকে গতকালও দেশের কয়েকটি স্থানে হিন্দুদের মন্দির ও ঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পরপরই স্থানীয় প্রশাসন ও থানার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। 
টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার কোকডহড়া ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া গ্রামে খড়ের পালায় দেয়া আগুনে পুড়ে গেছে একটি কালীমন্দির। গতকাল রোববার ভোরে এ ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে কালিহাতী থানায় মামলার পর একজনকে আটক করেছে পুলিশ। 
কালিহাতী থানার ওসি জহিরুল ইসলাম জানান, পাশের কুটুরিয়া গ্রামের দানেশ আলী রোববার ভোরে ফুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন শফিকুল ইসলামের একটি খড়ের পালায় আগুন ধরিয়ে দেয়। একপর্যায়ে সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের কালীমন্দিরে। স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় কালীমন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি আনন্দ চন্দ্র রাজবংশী বাদি হয়ে কালিহাতী থানায় মামলা করেন। পরে মামলার একমাত্র আসামি দানেশ আলীকে গ্রেফতার করা হয়। 
ওসি জানান, দানেশ আলীর কিছুটা মানসিক সমস্যা রয়েছে। এর আগে তিনি নিজেরই খড়ের পালায় আগুন ধরিয়ে দেন বলে জানা গেছে। 
নেত্রকোনা সংবাদদাতা জানান, নেত্রকোনা সদর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কালীমন্দিরে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে কলমাকান্দা-সদর উপজেলা সীমান্তে দুধকুড়া গ্রামের সেনবাড়ি কালীমন্দিরে এই ঘটনা ঘটে। কালীমন্দিরে আগুন দেয়ার সংবাদ শোনার পরপর পুলিশ সুপারসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যান। 
এ দিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, মন্দিরে অগ্নিসংযোগ ও বিএনপি নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে কলমাকান্দা উপজেলায় মানববন্ধন পালিত হয়েছে। উপজেলা যুবদলের উদ্যোগে গতকাল কলমাকান্দা সদরে বিএনপি অঙ্গসংগঠনের বিপুল নেতাকর্মী অংশ নেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার কায়সার কামাল হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও মন্দিরে অগ্নিসংযোগের সাথে জড়িত প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান। তিনি নির্দোষ ব্যক্তিদের হয়রানি না করারও জোর আহ্বান জানান।
হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর) সংবাদদাতা জানান, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার হাটিলা (পশ্চিম) ইউনিয়নের ধড্ডা মালি বাড়ির নিরঞ্জন চন্দ্র মালির একটি ঘর রাতের আঁধারে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার রাত ১টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। 
নিরঞ্জন চন্দ্রের পাশের বাড়ির সফিউল্যাহ জানান, রাতে প্রকৃতির ডাকে ঘরের বাইরে এলে তিনি মালি বাড়িতে আগুন জ্বলতে দেখেন। এ সময় তিনি ডাক চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। কিন্তু এর আগেই নিরঞ্জনের ঘরটি পুড়ে যায়। তবে এ সময় ঘরের মধ্যে কেউ না থাকায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। 
চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার আমির জাফর, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবু আলী মো: সাজ্জাদ হোসেন, সহকারী পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) মো: আবু হানিফ ও হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো: শাহ্ আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। 
নলছিটি (ঝালকাঠি) সংবাদদাতা জানান, নলছিটিতে গত শনিবার রাতে একটি বাড়ির মন্দিরসংলগ্ন খড়কুটায় এবং অন্য একটি বাড়ির জ্বালানি কাঠ রাখা ঘরের জ্বালানি কাঠে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। জানা গেছে, উপজেলার অভয়নীল গ্রামের দীলিপ শীলের বাড়ির রাধা শ্যামসুন্দর মন্দিরের পাশে থাকা খড়কুটায় এবং পাশের ফুলহরি গ্রামের মানিক দাসের বসতঘরসংলগ্ন জ্বালানি কাঠ রাখা ঘরের জ্বালানি কাঠে রাত দেড়টা থেকে ২ টার মধ্যে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। উভয় ক্ষেত্রে বাড়ির লোকজন টের পেয়ে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়।
গতকাল বিকেলে ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো: শাখাওয়াত হোসেন, পুলিশ সুপার মো: মজিদ আলী, নলছিটির ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। 
কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে একদল দুর্বৃত্ত খেজুরের রস চুরি করে পান করে যাওয়ার সময় তাদের দেয়া আগুনে সনাতন ধর্মবলম্বীদের মন্দিরের আংশিক পুড়ে গেছে। শনিবার রাতে উপজেলার জগন্নাথদীঘি ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামের বিনু ভূষণ মজুমদারের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উত্তম কুমার চক্রবর্তী জানান, দুর্বৃত্ত দল আশপাশ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করে মজুমদার বাড়ির পাশে তা পান করে যাওয়ার সময় মজুমদার বাড়ির সামনের মন্দির ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। 
কলারোয়া (সাতক্ষীরা) সংবাদদাতা জানান, গত শনিবার রাতে বামনখালি গ্রামের একটি মন্দিরে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা দু’টি ককটেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। এতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। অন্য দিকে এই নিয়ে এলাকার নিরীহ লোকজন মামলায় জড়িয়ে পড়ার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। কলারোয়া পুলিশ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে জানান।
http://www.dailynayadiganta.com/details.php?nayadiganta=OTU4Nw==&s=MQ==


Viewing all articles
Browse latest Browse all 358

Trending Articles