Quantcast
Viewing all articles
Browse latest Browse all 358

মতিয়া-টুকুর ভোট ডাকাতি?

Image may be NSFW.
Clik here to view.

টুকুর ভোট ছিনতাই বাহিনীর সিল মারা ৪৭৪টি ব্যালট পেপারের একটি।ছবি : কালের কণ্ঠ - 

পাবনা-১ আসনের (সাঁথিয়া-বেড়া) অধিকাংশ কেন্দ্র সকাল থেকেই ছিল নৌকা প্রতীকের ‘ভোট ছিনতাই বাহিনীর’ দখলে। চারটি কেন্দ্রে তারা প্রকাশ্যে একের পর এক ব্যালট পেপারে সিল দিয়ে বাক্স ভর্তি করেছে। ভোট ছিনতাইয়ের এ কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ায় একজন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারকে তারা লাঞ্ছিত করে। আসনটিতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়াই করেন। তাঁর বিপরীতে প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল আনুমানিক ২০ শতাংশ।
অভিযোগ উঠেছে, টুকুর এপিএস দোলনের নেতৃত্বে শতাধিক বহিরাগত শনিবার রাতে মিল্ক ভিটার রেস্ট হাউসে অবস্থান করে সকালে গিয়ে জাল ভোটে বাক্স ভর্তি করে। অধ্যাপক আবু সাইয়িদ অভিযোগ করেন, টুকুর সন্ত্রাসী বাহিনী ৫২টি কেন্দ্রে ভোট কারচুপি এবং ১৮টি কেন্দ্রে ভোট ডাকাতি করে। তিনি ১৮টি কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করতে লিখিত আবেদনও জানিয়েছেন। তবে শামসুল হক টুকু নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে দাবি করে বলেন, তাঁর কোনো সন্ত্রাসী বাহিনী নেই।
অন্যদিকে শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখল ও ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে দুপুরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা। 
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পাবনার সাঁথিয়ার পাইকারহাটি শহীদনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, সেখানকার দুটি কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের সমর্থক সন্ত্রাসীরা দুটি মাইক্রোবাসে এসে ভোট ছিনতাই করেছে। তারা জোর করে ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারের স্বাক্ষর ছাড়াই ২৩৮টি ভোট নৌকা মার্কার পক্ষে দেয়। কেন্দ্র দুটির প্রিসাইডিং অফিসার নজরুল ইসলাম ও প্রিসাইডিং অফিসার সাখাওয়াত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এসব অবৈধ ভোট। ব্যালট পেপারের ক্রমিক নম্বর দেখে সব অবৈধ ভোট বাতিল করা হবে। একটি কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার আব্দুল বাতেন বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের ব্যালট পেপার দিতে অস্বীকার করায় তারা আমার শার্টের কলার ধরে চড়-থাপ্পড় মেরেছে। অশ্লীল গালিগালাজ করেছে।’
ভোট ছিনতাইকারীদের এই দলটি মাইক্রোবাসে করে সাটিয়াকোলা এবতেদায়ি মাদ্রাসার দুটি কেন্দ্রে গিয়ে একই কায়দায় ভোটের বাক্স ভর্তি করে বলে জানা যায়। এখানে কেন্দ্রে নৌকার পক্ষে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে দেওয়া হয়েছে মোট ৪৭৪টি ভোট। প্রিসাইডিং অফিসার জামাল উদ্দীন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বেশ কয়েকটি ব্যালট পেপারে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার আগাম স্বাক্ষর দিয়ে রেখেছিলেন। সন্ত্রাসীরা সেসব ব্যালট পেপারেও নৌকার সিল মেরে বাক্সে ফেলেছে।
ওই কেন্দ্রের আরেক প্রিসাইডিং অফিসার আতিকুর রহমান বলেন, ‘বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ভোটকেন্দ্রে এসে ব্যালট পেপার ছিনতাই করার সময় আমি সহকারী রিটার্নিং অফিসারকে ফোন করে ঘটনা জানিয়ে তাদের গুলি করার অনুমতি চেয়েছি। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে তিনি কিছুক্ষণ পরে জানাচ্ছেন। টেলিফোনে কথা বলতে না বলতেই সন্ত্রাসীরা দ্রুত সটকে পড়ে।’
এ সময় পরিস্থিতির বর্ণনা করতে গিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নারী সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার কেঁদে ফেলেন। অন্য নির্বাচনী কর্মকর্তারাও কথা বলছিলেন ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায়। ওই চারটি কেন্দ্রের প্রতিটিতে একজন করে পুলিশ ও ১২ জন করে আনসার সদস্যের উপস্থিতিতেই এসব সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে। তবে অনসার সদস্যদের বেশ কয়েকজনকে শুধু লাঠি হাতে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। সন্ত্রাসীরা চলে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর ওই চারটি কেন্দ্রের সামনে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা অবস্থান নেন।
আবু সাইয়িদের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম পটল কালের কণ্ঠকে অভিযোগ করে বলেন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ছেলে আশিক আল শামস রঞ্জন এবং এপিএস আনিছুজ্জামান দোলনের নেতৃত্বে উল্লিখিত চারটি কেন্দ্রে ভোট ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এদিকে পাশের উপজেলা শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে কালের কণ্ঠের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, দোলনের নেতৃত্বে আগের রাতেই শতাধিক বহিরাগত প্রতিনিধি আতউর রহমান পিন্টু মিল্ক ভিটার রেস্ট হাউসে অবস্থান নিয়েছিল।
সূত্রমতে, শনিবার রাতে স্থানীয় বাঘাবাড়ী মিল্ক ভিটা দুগ্ধ কারখানার রেস্ট হাউসে শতাধিক বহিরাগত অবস্থান নেয়। কারখানার একাধিক সূত্র জানায়, বহিরাগতরা খুব সকালে রেস্ট হাউস থেকে বের হয়। এরপর দুপুর সোয়া ১টার দিকে ফিরে এসে তড়িঘড়ি করে একটি বাস ও তিনটি মাইক্রো বাসে উঠে ঢাকার উদ্দেশে চলে যায়। মিল্ক ভিটা দুগ্ধ কারখানা ম্যানেজার ডা. ইদ্রিস আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, রেস্ট হাউসে অবস্থানকারী কারা, সে সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। তবে তাদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর এপিএস আনিছুজ্জামান দোলন ছিলেন বলে ডা. ইদ্রিস আলী জানান।
গতকাল রবিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পাবনা-১ আসনের হুইখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (দুটি কেন্দ্র), নন্দনপুর কেটিএস আয়েশা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, ৭ নম্বর হাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (দুটি কেন্দ্র), হাতিগাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, পিপুলিয়া মহিলা মাদ্রাসা কেন্দ্র, সামান্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই নৌকা প্রতীকের লোকজন কেন্দ্রের ভেতরে অবস্থান নিয়ে আসে। এসব কেন্দ্র থেকে ভয় দেখিয়ে তালা প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।
নির্বাচন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভোট ছিনতাইয়ের জন্য সন্ত্রাসীদের উপস্থিতি টের পেয়ে দুপুর দেড়টায় সামান্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুলিশ দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। অন্যদিকে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে না পেরে সন্ত্রাসীরা পিপুলিয়া মহিলা মাদ্রাসা কেন্দ্রের পেছনে একটি পটকার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
সাইয়িদের অভিযোগ : স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক সাইয়িদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সাঁথিয়া ও বেড়ার ৫২টি কেন্দ্রে ভোট কারচুপি হয়েছে। ১৮টি কেন্দ্রে হয়েছে ভোট ডাকাতি। এসব কেন্দ্র থেকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ক্যাডাররা আমার এজেন্টদের মারধর করে তাড়িয়ে দিয়ে ব্যালট পেপার ছিনতাই করে ভোটের বাক্স ভর্তি করেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই ১৮টি কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করতে আমি তালিকাসহ সহকারী রিটার্নিং অফিসারের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছি।’ এর আগে সকালে ওই একই কেন্দ্র বৃশালিখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে গিয়ে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি শতভাগ জয়ী হব।’
টুকুর অস্বীকার : দিনভর সাঁথিয়া ও বেড়ার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের লোকজনের ভোট ডাকাতি ও অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু অভিযোগ অস্বীকার করেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘আমার কোনো সন্ত্রাসী বাহিনী নেই। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে।’ এর আগে সকালে বৃশালিখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুদ্ধে যেমন জয়-পরাজয় আছে, নির্বাচন যুদ্ধেও তেমনি জয়-পরাজয় আছে। জনগণ যাঁকে ভোট দেবেন, তাঁকেই মেনে নেব।’ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য ভোটাররা মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক নৌকায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেবেন।
মতিয়ার বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ বাদশার : শেরপুর-২ আসনের ঘোষিত ফলাফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বিপুল ভোটে জয়ী হলেও তাঁর বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা। বিষয়টি নিয়ে সর্বত্র আলোচনার ঝড় বইছে। 
এ আসনে ১৩৪টি কেন্দ্রের ফলাফলে নৌকা প্রতীকের মতিয়া চৌধুরী পেয়েছেন এক লাখ ৩৪ হাজার ৮১২ ভোট এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাদশা আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ৩৬ হাজার ১৫ ভোট। 
গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন বাদশা। নকলা শহরের হলপট্টি মোড়ে দুপুর দেড়টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে বাদশা অভিযোগ করে বলেন, ‘নকলার ৬৩টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৫০টি থেকে আমার এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। মতিয়া চৌধুরীর লোকজন ওই সব কেন্দ্র দখলে নিয়ে নিজেরাই সিল মেরেছে। ভোট কারচুপির মাধ্যমে ষড়যন্ত্র করে আমার বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।’
বাদশা বলেন, ‘যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর, সেখানে মতিয়া তাঁর লোকজন দিয়ে প্রকাশ্যে ভোট সিল মেরে নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচনে পরিণত করেছেন। তাঁর এ প্রহসনের নির্বাচন দুর্ভাগ্যজনক। এ সময়ে ওনার এটা করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। তাই আমি নিজেকে এ নির্বাচন থেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিচ্ছি।’
এ ব্যাপারে নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গোলাম রব্বানী বলেন, ‘বাদশার এটা একটা নাটক। নিশ্চিত ফেল জেনেই তিনি এখন ভোট কারচুপির এবং এজেন্ট বের করে দেওয়ার সাজানো অভিযোগ করছেন। তাঁর অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। নকলায় কোনো প্রকার কেন্দ্র দখল কিংবা কোনো অবৈধ সিল মারার ঘটনা ঘটেনি। এসব বানানো কথা। নকলায় বাদশার কোনো ভিত্তি নেই, আর মতিয়া চৌধুরী নকলার বাসিন্দা।’
নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা কেন্দ্রে সকাল ১১টা পর্যন্ত দুই হাজার ৪৮৬ ভোটের মধ্যে ২৫০ ভোট পড়লেও ভোটগ্রহণ শেষে ওই কেন্দ্রেই শতকরা ৭০ ভাগ ভোট পড়েছে বলে দেখা যায়। ওই কেন্দ্রে বাদশার এজেন্ট ফারুক আহম্মেদ অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাকে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে একই লোক দিয়ে বারবার সিল মেরে নৌকার পক্ষে ভোট দেওয়া হয়েছে। শিববাড়ী মাওরা ও রামপুর কেন্দ্রে বুলবুল এবং জিন্নাহ নামে নৌকার দুই সমর্থক কেন্দ্র দখল করে সিল মেরেছে। ধনাকুশা কেন্দ্রে দুপুর পৌনে ১টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, ওই আসনের দুই হাজার ৬১৬ ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে মাত্র ৬০০। কিন্তু ভোটগ্রহণ শেষে ওই কেন্দ্রে শতকরা ৭৭ ভাগ ভোট পড়েছে বলে দেখানো হয়েছে। এদিকে নালিতাবাড়ী উপজেলায় বদিউজ্জামান বাদশা মতিয়া চৌধুরীর প্রায় অর্ধেক ভোট (নৌকা-৫০৫৩৪, আনারস-২৮৩৬৭) পেলেও নকলায় ৮৪ হাজার ২৭৬ ভোটের বিপরীতে বাদশাকে দেওয়া হয়েছে সাত হাজার ৬১৯ ভোট।’
- See more at: http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2014/01/06/38580#sthash.Tf1gr14D.ae5rxFUI.dpuf

Viewing all articles
Browse latest Browse all 358

Trending Articles