Quantcast
Viewing all articles
Browse latest Browse all 358

হাসিনা কেন এত হিংস্র ? খালেদাকে ভারত চায় না, তাই বিপুল অর্থ নিয়ে মাঠে ‘র’

Image may be NSFW.
Clik here to view.
Mena fara
মিনা ফারাহ

**********************
সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় এখন একমাত্র আসমানি হস্তক্ষেপ ছাড়া আর কেউই টলাতে পারবে না। এথেন্স আদালতে সক্রেটিসের শেষ বক্তব্য নিয়ে প্লেটোর লেখা ‘অ্যাপোলজি’ বইটি অনেকেরই পড়া। সেই সূত্রেই লেখাটি।
সক্রেটিসের চেয়ে জ্ঞানী কেউ নেই, গ্রিক দেবতা অ্যাপোলোর এমন বক্তব্যের পর, দেবতাকে ভুল প্রমাণ করতে প্রথমেই বেছে নিলেন একজন জ্ঞানী রাজনীতিবিদ।
এরপর সক্রেটিস বললেন সেই কথাটি, ‘এবার আমি জানি, আমিই জ্ঞানী, কারণ আমি অন্তত একটি কথা জানি যে, আমি আসলেই কিছু জানি না। আর ওই রাজনীতিবিদ মনে করেন সব জানেন, কিন্তু তিনি জানেন না যে, আসলেই তিনি কিছু জানেন না।’
জ্ঞানের ফেরিওয়ালাদের জন্য এটাই যথেষ্ট সত্ত্বেও সক্রেটিসের ২৪০০ বছর পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে এত পণ্ডিতের জন্ম হয়েছে, যাদের অবাধ্য জিহ্বার কারণেই মহা-অরাজক। অশ্লীল বাক্যবানে শ্লীলতা হারিয়েছে রাজনীতির ভাষা। এরা জানে না এমন কিছু পৃথিবীতে নেই কিংবা সম্ভবও না।
এদের অপরিসীম বুদ্ধি জোর করে ঢুকিয়ে দেয়ায় জাতির মনোজগতে অভাবনীয় খরা এবং নৈতিকতা প্রায় ধূলিসাৎ। উগ্র রাজনীতির বিরূপ প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে গেছে সমাজ, ধর্ম, রাজনীতিতে। মাকে খুন করছে সন্তান, ভাতিজাকে খুন করছে চাচা, স্বামীকে বিশ্বাস করছে না স্ত্রী। এসবই রাজনীতিবিদদের সৃষ্টি।

‘অনির্বাচিত আর নয়’ অজুহাতে হঠাৎ একদিন জোর করে চাপিয়ে দিলো সংবিধানের ১৫তম সংশোধনী। ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতেই সংশোধনী, কথাটি জাতিকে কত হাজারবার শুনিয়েছেন হাসিনা? আর তিনিই এখন প্রায় পাঁচ কোটি ভোট বাইরে রেখে নির্বাচিত!
বিশ্বাস করি না, জেনেশুনে কাজটি করা হয়নি। বিদেশী পত্রিকা ধাপে ধাপে তার পরিকল্পিত অভ্যুত্থানের প্রশ্ন তুলছে। সব জানার বিপদ কি বুঝিয়ে বলতে হবে? মানুষ রার অজুহাতে সংবিধান সংশোধন মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। ‘যে নিজেই জানে না, জোর করলেও কাউকে শেখাতে পারবে না’, ২৪০০ বছর আগে বলেছেন পণ্ডিত সক্রেটিস।
৪৩ বছর পর সাড়ে সাত কোটি মানুষ ১৬ কোটি হলেও, আমরা কি ’৪৭-পূর্ববর্তী অভিভক্ত বাংলার বাঙালি নাকি ’৭১-পরবর্তী বাংলাদেশী… আজ পর্যন্ত মীমাংসা করিনি। যেমন করিনি পিণ্ডিমুক্ত হয়ে আমরা দিল্লির সারোগেট স্টেট কি না। ৩০ লাখ নাকি ৩০ হাজার শহীদ? ১৬ ডিসেম্বর নাকি ২৬ মার্চ? আজ পর্যন্ত বলেনি ১৯৫ জন শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিনা বিচারে কেন ছেড়ে দেয়া হলো! চার দিকে আগুন আর খুন অথচ সরকারের ড্যামকেয়ার। ৪৩ বছর ধরেই জ্ঞানীদের পেছনে দৌড়াচ্ছি, যাদের বুদ্ধির ঝোলা ফাঁকা। আর এদের কারণেই জাতির মনোজগতের অবস্থান সর্বনিম্নে। টপ-টু-বটম বেশির ভাগেরই ওয়ার্ড কমিশনারের যোগ্যতা নেই সত্ত্বেও এরাই ১৬ কোটি মানুষের আইনপ্রণেতা এবং নীতিনির্ধারক হওয়ায় আমরা এই আস্তাকুঁড়ে।
২.
কাদের মোল্লার ফাঁসিতে স্তম্ভিত নই, বরং প্রক্রিয়ায়। মৃত্যুর কোনো মূল্য দেয়া সম্ভব নয়, তা সত্ত্বেও নির্দিষ্ট দিন টার্গেট করে আত্মার মূল্য নির্ধারণ করল পণ্ডিতজীবীরা। গর্বিত প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিলেন ১৪ ডিসেম্বরের আগে ফাঁসি দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা।
এতে একপ খুশি, কিন্তু সার্বিক যন্ত্রণা তুঙ্গে। ফাঁসির আসামিরা ১০-২০ বছর জেলে থাকলেও এই ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এমন সব প্রভু মহলে যারা আমাদের খাওয়ায়-পরায়। সুতরাং এহেন স্বৈরাচারী আচরণে বিদেশীরা নাক গলাবেই।
ভাত-কাপড় তো এরাই দেয়। রিজার্ভের ১৮ বিলিয়ন ডলার গোপালগঞ্জের অভ্যন্তরীণ জিডিপি থেকে এসেছে মনে করা ভুল। অসুস্থ মাথা এসব ঘাটায় না। মোল্লার লাশ নিয়ে ১৫ আগস্টের গোপনীয়তায় সন্দেহ, এখন তো ডালিম-রশিদেরা নেই, তাহলে?
অর্থাৎ অতি উত্তেজিত রাজনৈতিক জিঘাংসাই পশুবৃত্তিকে চরমপর্যায়ে উসকে দিয়েছে। মাংসের মতো কুপিয়ে বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগের অভূতপূর্ব পশুবৃত্তি দেখে শিউরে উঠেছি। হাজার হাজার জীবন দিয়ে প্রমাণ করছি সবজান্তাদের না জানার বোঝা কত বিপজ্জনক। এখন তো ডালিম-রশিদদেরা নেই তাহলে ১৫ আগস্টের পর মুজিবের লাশ নিয়ে একই নাটক, আমরা কি বুঝতে কিছু ভুল করছি?
সুতরাং লাশের অধিকার প্রশ্নে, মোল্লা পরিবারের প্রতি সমবেদনায় মুখরিত বিশ্ব। এই ভার সামাল দেয়ার ক্ষমতা সরকারের নেই। একই দিনে এরশাদকে গ্রেফতার করে সরকারের পোর্টফলিওর ওরা নির্বাচন আদায় করে প্রমাণ করল এদের সাথে মুক্তিপণ সন্ত্রাসীদের পার্থক্য নেই। আমরা চীন বা উত্তর কোরিয়া না হয়েও মানবাধিকার হরণে ওদের সাথে পাল্লা দিয়েছি। মনে হচ্ছে সরকার যেন সবাইকে ফাঁসির মঞ্চে একসাথে বেঁধে ক্রমাগত বোতাম টিপছে।
৩.
প্রশ্ন, দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে কি না! বারবারই হত্যার অভিযোগ করছে দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংগঠনগুলো। যে কারণে মোবারক মুরসির বিচার শেষে মৃত্যুদণ্ড হতে পারে, একই কারণ বাংলাদেশে ঘটলেও ব্যতিক্রমের কারণ তিনটি।
এক. সস্তা শ্রম অর্থাৎ সর্বনিম্ন মূল্যে শ্রমের জন্য না হলে পশ্চিমারা হয়তো অনেক আগেই অ্যাকশনে যেত। হয়তো অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও দিত। কিন্তু তা করলে ওয়ালস্ট্রিটের তি হতে পারে। এক ডলার খরচ করে ৬০ ডলারে বিক্রি অর্থাৎ লাভের হার ১:৬০ কিংবা বেশি। এত সস্তা শ্রম একমাত্র বাংলাদেশেই। ২২ বিলিয়ন খরচ করে প্রায় অর্ধ ট্রিলিয়ন (৫০০ বিলিয়ন) আয় অর্থাৎ চারটি বাংলাদেশের অর্থনীতির সমান অর্থ তুলে নেয়। গোটা বাংলাদেশের অর্থনীতি ১৪০ বিলিয়ন ডলারের কম।
দুই. পুঁজিবাদীদের সঙ্ঘাত অর্থাৎ প্রণব মুখার্জিদের কারণে অ্যাকশনে যেতে পারছে না পশ্চিমারা। যেমন করে বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্তই নিতে না পারার কারণ রাশিয়া। রাশিয়ার স্বার্থ, ভেটো পাওয়ারের বদলে সিরিয়ার সস্তা তেল। ভারতের স্বার্থ অবিভক্ত বাংলা পুনরুদ্ধার।
তিন. পণ্ডিতজীবীদের কণ্ঠে দিল্লির প্রতিধ্বনি। মিলিয়ে দেখুন, ইকবাল সোবহান চৌধুরীর সাথে সুজাতা সিংয়ের বক্তব্য এক কি না। সাম্রাজ্যবাদী ইন্দিরা আদর্শের দাদারা অবিভক্ত বাংলা কায়েম করতে আদাজল খেয়ে মাঠে। ইতোমধ্যে সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ।
সুতরাং আমাদের সঙ্কট বহুমাত্রিক। আমাদের ক্যান্সারও খুব আপত্তিকর জায়গায়। পশ্চিমারা যতণ পর্যন্ত সস্তায় ফসল তুলবে ততণ পর্যন্ত মানবতাবিরোধী সরকারদের তোয়াজ করবে। যতণ পর্যন্ত অ্যাকশনে না গিয়ে সংলাপের কথা বলবে, ততণ পর্যন্ত বুঝতে হবে তারা নিজের স্বার্থই দেখছে। হেফাজত কিংবা বিডিআর হত্যাকাণ্ড… পাঁচ বছরের যত অপরাধ, প্রথম ১০টি বেছে নিলেই হাসিনার অবস্থান চার্লস টেলর কিংবা মুরসির কাতারে না হওয়ার কারণ নেই। নথিপত্রে নিরস্ত্র মানুষ হত্যার প্রমাণ দিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। এর পরও একনায়কত্বের কাছে আত্মসমর্পণে ’৭১কে বরং রক্তশূন্যই মনে হয়। ফিরতে হয় সক্রেটিসের কাছে, ‘…মিথ্যা কথাগুলো এমন সুন্দর করে বলে যে, সহসাই আমিও সত্য মনে করে ভুল করি।’
৪.
৯ মাস যুদ্ধ করে এমন এক দেশ পেলাম, যেখানে মই বেয়ে উঠে করাত দিয়ে গ্রিল কেটে বিরোধী নেতাদের গ্রেফতার করে পণ্ডিতজীবীদের দল। পণ্ডিত ওবায়দুল কাদের বললেন, রাজি হলেই শীর্ষ নেতাদের মুক্তি। আমরা কি চীন নাকি উত্তর কোরিয়া যে, বন্দী রেখে আদায় করতে হবে? এদের কারণেই উচ্চতার মই বেয়ে নিচের দিকে নামছে বাংলাদেশ। তালেবান ছাড়াই ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
যারা সন্ত্রাসের অভিযোগ করছে আদৌ তারা শব্দটির অর্থ বোঝে না! আন্দোলন ছাড়া কোনো দাবিই আদায় হয় না। শুরুতে ক্যাস্ট্রোর সহায়তায় ম্যান্ডেলাও ছিলেন ভয়ঙ্কর সশস্ত্র গেরিলা যোদ্ধা যিনি বাংকারে থেকে সংগ্রাম করলে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিলো শ্বেতাঙ্গ সরকার। বিচারককে বলেছিলেন, তোমরা যাকে সন্ত্রাস বলো আমার কাছে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার বিনিময়ে মরতে রাজি। সন্ত্রাসী ও জঙ্গি কাতারে ফেলে বহির্বিশ্বকে জানান দিতে পণ্ডিতদের আঙুল ১৮ দলের দিকে।
তবে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ায় বাংলাদেশেও সন্ত্রাস শব্দটি বিনির্মাণ না করার কারণ নেই। মাত্র ২০০৮ সালে ম্যান্ডেলাকে সন্ত্রাসী তালিকামুক্ত করল স্টেট ডিপার্টমেন্ট। তবে সরকারের জঙ্গি আর সন্ত্রাসবাদ খুব ভালো বিক্রি হচ্ছে না পশ্চিমে। জঙ্গিবাদের নামে হাজার হাজার হত্যাকাণ্ডে তুলকালাম পশ্চিমি মিডিয়া এবং মানবাধিকার সংগঠনে।
মহাপণ্ডিতদের হিসেবে খালেদা একজন খুনি, সন্ত্রাসী, রক্তপিপাসু গোলাপী, যার কাজ ঘরে বসে গরম স্যুপ আর মুরগির ঠ্যাং চিবিয়ে মানুষ হত্যার নির্দেশ দেয়া। দেখা যাক, খালেদার দোষ। বাস্তবতা বলে, ১৫তম সংশোধনীর অধীনে নির্বাচনে গেলে সব হারাবেন খালেদা, আমৃত্যু প্রধানমন্ত্রী থাকবেন হাসিনা। মোটাদাগে খালেদার এক দফা মানলে হাসিনার সর্বনাশ। খালেদাকে ভারত চায় না, এই কাজে বিপুল অর্থ নিয়ে মাঠে ‘র’।
ভারতীয় সৈন্য ফেরত দেয়ার অপরাধে ’৭২-এই মুজিবের ভাগ্য নির্ধারণ করেছিল ‘র’। আমরা শুধু বরফের মাথাটাই দেখছি, পুরো শরীর পানির তলে। বাংলাদেশের যা কিছু ঘটছে এবং ঘটবে দৃশ্যত সবই ভারতের অ্যাকশনে। বিরোধী দলকে রাস্তায় দাঁড়াতে পর্যন্ত দেয় না ৩৩০ দিন হরতাল করা সরকার, টকশোর মহাপণ্ডিতদের কাছে প্রশ্ন, এই পরিস্থিতিতে অবরোধ ছাড়া খালেদার আর কী করণীয়? খালেদার সমান অত্যাচারিত হলে জনতার মঞ্চ করা আওয়ামী লীগ আর কী ধরনের অ্যাকশনে যেত, ভাবাও দুঃস্বপ্ন। এরাই ত্বকীর মঞ্চের বিরুদ্ধে শামীম ওসমানকে মনোনয়ন দিয়ে জগৎ বিস্মিত করেছে।
সুতরাং দিল্লির সাম্রাজ্যবাদ রুখে দিতে বিরোধী দলকেই প্রত্য ও পরো সমর্থনের কারণে বিজয় আসবেই। খালেদার পকেটে ৯০ শতাংশ সমর্থন। আওয়ামী জনপ্রিয়তায় ধস নামায় বন্দুকের নল আর গণজাগরণ মঞ্চই ভরসা। অনেকেরই প্রশ্ন, ’৬৯-এর মতো কেউ রাস্তায় নামছে না কেন? খালেদার কি জনসমর্থন নেই? এর উত্তর, এরা ’৬৯-এর চেয়েও ভয়ঙ্কর স্বৈরাচার। তখন একটি লাশ পড়লে গর্জে উঠত মানুষ, এখন রীবাহিনীর মতো একাই গর্জন করে র‌্যাব, বুট, বুলেট।
মার্কিন পাপেট বাতিস্তা সরকার উৎখাতের সময় ক্যাস্ট্রোর সৈন্য কম থাকলেও জনসমর্থন ছিল প্রচুর। যার শিশুসুলভ আচরণে তারানকোকে ঢাকায় আসতে বাধ্য করা হলো, তার কী মতা দেশ চালায়! সক্রেটিসের কথা, ‘এই ব্যক্তি যিনি মনে করেন সব জানেন, কিন্তু তিনি জানেন না, আসলেই কিছু জানেন না।’
৫.
যদি প্রশ্ন তুলি, রাষ্ট্রপতি হয়ে মুজিব কোট পরা বেআইনি কি না, পেটখারাপের মতো ছুটবে মহাপণ্ডিত হানিফ, কামরুল, নাসিমদের অবাধ্য জিহ্বা। এরা জানে না এমন কিছু থাকলে অনুবীণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজতে হবে। এদের জ্ঞানের বিশালতা গিনিস বুকের যোগ্য। শিশুশিক্ষায় পড়েছি, ‘আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে আমি যেন সেই কাজ করি ভালো মনে।’ এখানে তিনটি শব্দ এক কাতারে, যেমন- ভালো, গুরুজন ও আদেশ। শিশুবয়সেই এসব চারা বুনে দিয়েছেন অভিভাবকেরা। অভিভাবক যারা পিতা-মাতা, যারা শিক্ষক, যারা রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের অভিভাবক রাষ্ট্রপতি, যার দায়িত্ব দল-মত নির্বিশেষে সবার প্রতি সমান অভিভাবকসুলভ আচরণ।
কী দেখলাম? রাষ্ট্র যখন পুড়ছে, বার্ন ইউনিট যখন উপচে পড়ছে, ডাক্তাররা যখন চিৎকার করছে, রাষ্ট্রের অভিভাবক তখন সন্তানদেরকে অরতি অসহায় রেখে নিজের সুচিকিৎসার স্বার্থে বিশেষ বিমানে আবারো বিদেশ গেলেন। অল্প ব্যবধানে একবার ব্যাংকক আরেকবার সিঙ্গাপুরে যাওয়ার যথেষ্ট যুক্তি না থাকার কারণ, অসুস্থতা এমন ভয়াবহ ছিল না যে জন্য দেশের চিকিৎসকেরা অম-অযোগ্য। তার মানে এই দাঁড়ায়, দেশের ৯৯.৯৯ শতাংশ মানুষ যাদের ওপর নির্ভরশীল, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তিরা সেসব ডাক্তারের ওপর ন্যূনতম আস্থাও রাখেন না।
সুতরাং প্রতিবারই রাষ্ট্র এদের পেছনে বিপুল অর্থ জোগান দিতে বাধ্য। যে দিন সিঙ্গাপুরে গেলেন সে দিনও পোড়া মানুষদের চিৎকারে কাঁপছে বার্ন ইউনিট। রাস্তাঘাট জ্বলছে মিসরের মতো। বিকট আওয়াজে গর্জে উঠছে পুলিশের বুলেট। তবে সাথে করে যদি বার্ন ইউনিটের রোগীগুলোকেও নিয়ে যেতেন, বুঝতাম তিনি অভিভাবকের দায়িত্বই পালন করলেন। জীবন বড় সুন্দর জিনিস, সবাই বাঁচতে চায়। এখানে ছোট-বড়, প্রেসিডেন্ট-প্রজায় পার্থক্য নেই।
না। একবারও বার্ন ইউনিটে যাননি। বরং সিঙ্গাপুর থেকে ফিরেই দক্ষিণ আফ্রিকা। এ দিকে একজন তারানকো যখন ভাঙা হাড় জোড়া দিতে দৌড়ঝাঁপ, তখন জানাজায় যাওয়া কতটা জরুরি! অভিভাবকদের এহেন দায়িত্বহীনতা ব্যয়বহুল পদটিকে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। রাষ্ট্রপতির কাজের সাথে ব্যয়ের সঙ্গতি নেই। এদের রেখে কী পায় জাতি! তবে কালো ম্যান্ডেলার জানাজায় শ্বেতাঙ্গদের বিপুল অংশগ্রহণে যদি দেশবাসীর জন্য সবাইকে নিয়ে রাজনীতির কিছু জ্ঞান এনে এই আগুনে শান্তির বৃষ্টি ঝরাতেন, বলতাম ঠিক করেছেন। বলা বাহুল্য, ম্যান্ডেলা বুঝেছিলেন, যাদের সাথে থাকতে হবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গেলে সঙ্কট বাড়বে।
৬.
সমস্যা এই যে, সরকারের সব মতামতের সাথে সব পেশার সবাই সব সময় একবাক্যে একমত। যে অপরাধে মৃত্যুদণ্ড হলো, সরকারকে সক্রেটিস বলেছিলেন, “একমাত্র ‘কেন’ প্রশ্নটি ঢুকিয়ে দেয়া ছাড়া যুবসমাজকে আমি কিছুই শেখাতে জানি না। আমি হচ্ছি সেই পোকা যে কামড় দিলে মানুষ জাগে।”
আমাদের ‘কেন’ প্রশ্নগুলো কোথায়? ‘কেন’ ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলে ভোটারবিহীন নির্বাচন? …হাসিনাকেই ‘কেন’ ২০২১ সাল পর্যন্ত মতায় থাকতে হবে? …বিরোধী দলের অফিসের সামনে ‘কেন’ পুলিশি রাষ্ট্র? …বিতর্কিত খায়রুল হক আইন কমিশনার? ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত গুম করল ‘কেন’? …হলমার্কের সাথে জড়িত স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বিচার হলো না? পদ্মা সেতু, সাগর-রুনি…?
আর কত র‌্যাব-পুলিশের নিপীড়ন! আর কত সংখ্যালঘু কার্ড! সরকারের শিশুসুলভ জেদ অব্যাহত থাকলে খেলনার মতো ভেঙেচুরে যাবে দেশ। যেকোনো কাজেই লাগে হোমওয়ার্ক। ৪০ বছরের শীতলযুদ্ধ শেষ করতে রোনাল্ড রিগ্যান বললেন, মি. গর্বাচেভ! ভেঙে ফেলুন ওই দেয়াল, বলেছিলেন, পূর্ব-পশ্চিম জার্মানির মধ্যে ২৬ বছরের বার্লিন দেয়ালটির কথা। সোভিয়েত সমাজতন্ত্র কফিনে পাঠাতে সে দিন রিগ্যানের হোমওয়ার্ক ছিল। নাৎসিদের বিতর্কিত বিচারের আগে মিত্র দেশগুলোর হোমওয়ার্ক ছিল। আফগানিস্তান আক্রমণের আগে হোমওয়ার্ক ছিল ক্যাপিটলহিলের, যার প্রমাণ ১২ বছর দেখছি। মানবতাবিরোধীদের মার আগে হোমওয়ার্ক ছিল ম্যান্ডেলার। আমাদের প্রধানমন্ত্রী কি হোমওয়ার্কে বিশ্বাস করেন? করলে অনেক কিছুই উচিত সত্ত্বেও করতেন না, যেমন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। করলেও অর্থনৈতিক যোগ্যতা এবং ঝুঁকির হোমওয়ার্ক করে স্বচ্ছ বিচার নাকি নির্বাচনমুখী বিচার! চাইলে বিশ্বযুদ্ধও করতে পারি, কিন্তু সেই মুরোদ কি আছে? আমরা ক্যাস্ট্রো কিংবা শ্যাভেজ, কোনোটাই হতে পারব না।
বাস্তবতা এই, ১৬ কোটি মানুষের সপ্তম জনবহুল দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতি, সবচেয়ে বসবাসের অয্যোগ্য রাজধানীর নাম ঢাকা। দেশটির আয়তন ‘আইওয়া’ অঙ্গরাজ্যের সমান, কিন্তু বাস করে আমেরিকার অর্ধেক জনসংখ্যা। দৈনিক মাথাপিছু আয় দেড় ডলারের নিচে, রাজধানীর প্রায় ৪৮ ভাগ মানুষ বস্তিতে। অভ্যন্তরীণ কর্মজগতের বেশির ভাগই গায়েগতরে শ্রমিক। ৭৯ শতাংশ অর্থনীতিই গার্মেন্ট এবং বিদেশী রেমিট্যান্স নির্ভরশীল। সুতরাং পানিতে বাস করে কুমিরের সাথে যুদ্ধ করে কোন গাধা! প্রায় এক কোটি মজুর বিদেশীদের মর্জির ওপর নির্ভরশীল, ছুতো পেলেই শ্রমিক ছাঁটাই, ধরপাকড়, খুন। রহস্যজনক কারণে মধ্যপ্রাচ্যের ভিসা প্রায় বন্ধ।
জোর করে সবাইকে চেতনা খাওয়ানো যাবে না, প-বিপ তুলে সবার কাছে সব সময় সব কিছু আদায় করাও সম্ভব নয়। নিজের মতামত অন্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে সাময়িক বিজয় সম্ভব, পরবর্তী সময়ে টেকসই নাও হতে পারে। ’৭১কে কেন্দ্র করে এখনো অনেক দেশেরই অ্যালার্জি। মুক্তিযুদ্ধ চায়নি চীন-আমেরিকা। এখনো সমর্থন করে কি না সন্দেহ। ধর্মনিরপেতার নামই শুনতে চায় না মধ্যপ্রাচ্যের প্রভুসমাজ। এদের চাপেই ১৯৫ জন শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীকে মুক্ত করার গুজব। প্রায় ৬০ লাখ মজুর গার্মেন্ট শিল্পের ওপর সরাসরি নির্ভরশীল। মোটাদাগে প্রায় ১২ কোটি মানুষ প্রত্য ও পরোভাবে বিদেশী অর্থের ওপর নির্ভরশীল। প্রায় অর্ধেক মানুষ কম শিতি কিংবা নিরর। বেকার সমাজ গড়ে তুলেছে ভয়ঙ্কর অপরাধ জগৎ। ইচ্ছে করেই ‘মাদক এপিডেমিক্স’ লুকিয়ে রেখেছে সরকার। মধ্যরাতের ভয়ঙ্কর ঢাকা নগরীর দৃশ্য দেখেছি। আসছে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। ১৬ কোটি মানুষের ঝুঁকি বিবেচনা ছাড়াই কেউ যখন অর্থনীতির চালকদের এই পর্যায়ে চটায়, যোগ্য-দ রাজনীতিবিদ বলা যাবে কি না!
প্রতিপরে লবি এবং টাকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মতা সরকারের থাকলে শুরুতেই মোকাবেলা না করায় পরিস্থিতি এই পর্যায়ে গেছে। ফলে এই শক্তির মিত্ররা সরকারের শত্রু। স্কাইপ কেলেঙ্কারির পর আন্তর্জাতিক মহলের সন্দেহ বেড়েছে। মোটাদাগে, সমালোচকেরা মনে করছেন বিচার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক। আফগান-পাকিস্তানের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, অর্থনৈতিক শক্তিগুলো কিভাবে কর্তৃত্ব করছে। প্রয়োজনে হাসিনাকে আশ্রয় দেবে ভারত কিন্তু গার্মেন্ট, রেমিটেন্স বন্ধ হলে গরিব মানুষ কী খাবে? ‘বাংলাদেশ এমন খাদে পড়বে যা তারা আগে কখনোই দেখেনি’ লিখেছেন, ব্যারিস্টার টবি ক্যাডম্যান, যিনি যুদ্ধাপরাধী চার্লস টেলরের অন্যতম আইনবিদ ও লবিস্ট।
ইতোমধ্যে ব্যবসায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ছোট ও মাঝারি আকারের গার্মেন্টগুলোর। দুই বছরের অগ্রিম বেতনের জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে ধর্ণা দিয়েছে বিজিএমইএ। এফবিসিসিআইয়ের মেরুদণ্ডহীন সভাপতি মাল মুহিতকে প্রথমে বললেন, আল্লাহর পরেই শেখ হাসিনা, তার পরেই জানালেন দুই হাজার কোটি টাকার আবদার। সুতরাং আমার সন্দেহ, এরাও হলমার্ক, ডেসটিনির মতোই বৃহৎ পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে।
ইতোমধ্যে অনেকে বিপুল অর্থসহ পালিয়েও গেছে। স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টে আগুন রহস্যজনক না হলে, রানা প্লাজার এত মৃত্যুর পরও শুকনো চোখের এসব ‘নরাধম’ প্রধানমন্ত্রীকে ঘটনাস্থলে নিয়ে হাজার কোটি টাকার জন্য কান্নাকাটি করবে কেন? অর্থাৎ জেদ আর মুরোদে তালগোল পাকালে যা হয়। মূল কথা হাসিনার জেদে অর্থনীতি প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। যারা হুজুগে নাচছে, রক্তশূন্য অর্থনীতির খবর রাখে না। রাখলে শাহবাগীদের অভ্যুত্থানের প্রশ্নই উঠত না।
৭.
বিশেষ বিমানে দণি আফ্রিকা কিংবা ম্যান্ডেলার জন্য তিন দিন রাষ্ট্রীয় শোক করে লাভ নেই বরং উচিত তার আদর্শ অনুসরণ। কিন্তু সমাধানের একটিও ফর্মুলা ছাড়াই নিত্যনতুন যুদ্ধত্রে খুলছে সরকার, ফলে অর্থনীতি আরো ডুবছে। কে কার কথা শোনে? চারজন মার্কিন প্রেসিডেন্টসহ ৭৮ জন রাষ্ট্রপ্রধান জানাজায় কেন গেল, শেখার কি কিছুই নেই! বিজয়ের ফর্মুলা ভিন্ন। বিজয়ীর চেহারাও ভিন্ন। ম্যান্ডেলার কথাই ধরা যাক।
১৯৯১ সাথে পশ্চিমে এসে ব্যাপক লবির মাধ্যমে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রেখে বর্ণবিদ্বেষীদের পতন ঘটিয়েছিলেন। এরপর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েই অভূতপূর্ব মার দৃষ্টান্ত রেখে জাতিকে অনিবার্য গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচিয়ে দিলেন ম্যান্ডেলা। ম্যান্ডেলার ফর্মুলার বিকল্প নেই। বহুমূত্র রোগীকে একই সাথে গ্লুকোজ আর ইনসুলিন চিকিৎসা দিলে হয় শকে, নয় শ্বাসকষ্টে মারা যাবে। পক্ষ-বিপক্ষের যুদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধ রক্ষা হবে না। চেতনাও টিকবে না বেশি দিন। শ্বাসকষ্ট চলছে দেশের। ম্যান্ডেলাকে ২৭ বছর একটি প্রোকষ্ঠে বন্দী করে রাখল, পাথরকুচি করালো ২৭ বছর, দুই সন্তানের জানাজায় পর্যন্ত যেতে দেয়নি, কিন্তু ’৯৪ সালে সাধারণ ক্ষমা এবং তাদের নিয়েই সরকার গঠনের দৃষ্টান্ত থেকে আমাদেরও পক্ষ-বিপক্ষ যুদ্ধ বন্ধ না করার জায়গা নেই। অন্যথায় হত্যাকাণ্ড বাড়বে, সংখ্যালঘুরা হবে বলির পাঁঠা। নাৎসিদের বিচার আর দক্ষিণ আফ্রিকা বা বাংলাদেশের প্রোপট ভিন্ন।
ম্যান্ডেলার ফর্মুলা অনুযায়ী জামায়াত-শিবিরসহ সব দলকে নিয়েই রাজনীতি করতে হবে কারণ এরা অন্য দেশে যাচ্ছে না। শিবসেনা, বিজেপি, হিন্দু মহাসভাকে নিয়েই ভারতের রাজনীতি। আইন, সংবিধান, ব্যক্তিগত কষ্ট, পাশ কাটিয়ে একক সিদ্ধান্তে ম্যান্ডেলা যা করেছেন, সুফল ভোগ করছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
১৩ বছর ধরে পক্ষ-বিপক্ষের যুদ্ধ ছাড়া আর কী করেছি? বুঝলাম, হাসিনাই ১০০ ভাগ ঠিক কিন্তু এভাবেই কি আগামীর ১০-২০ বছর চলবে? তাহলে স্বেচ্ছায় যে দায়িত্ব নিয়েছেন হাসিনা, ৯০ শতাংশের স্বার্থে ১০ শতাংশকে হয় মানতে হবে, নয় অন্য দেশে পাঠিয়ে দিতে হবে, কারণ এভাবে চলা সম্ভব নয়। সর্বস্তরের জিঘাংসা যেমন বেড়েছে, বাংলাদেশের অস্তিত্বও তেমনই হুমকির মুখে। বিচারের কারণ ম্যান্ডেলারই বেশি এবং গৃহযুদ্ধের ঝুঁকি আমাদেরই বেশি কারণ আমাদের সংস্কৃতি, গায়ের রঙ, ধর্ম এক হলেও ওরা সাদা বনাম কালো।
বাইরের শত্রুর সাথে যুদ্ধ শেষ হয় কিন্তু ঘরের যুদ্ধ চলে অনন্তকাল। বুঝতে হবে যে, ম্যান্ডেলা সাদা-কালোদের মতো আমাদেরকেও সবাইকে নিয়েই বাস করতে হবে। এক ধর্ম, বর্ণ, ভাষার মানুষের মধ্যে আদর্শের যুদ্ধ আসলেই কোনো যুদ্ধ নয়। না মানলে ম্যান্ডেলার মতো দেশী-বিদেশী অর্থনৈতিক চাপে রেখেই পতন ঘটাতে হবে। কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত জেদে সত্যি সত্যিই গৃহযুদ্ধ শুরু হলে, সেই দায়িত্ব গোটা জাতি বহন করবে না। আর কত লাশ পড়লে ‘চৈতন্য’ উদয় হবে? কবে দেখব বুদ্ধিজীবীদের অসহযোগ আন্দোলন!
[লেখক : নিউইয়র্ক প্রবাসী]
farahmina@gmail.com
- See more at: http://www.sangbad24.net/?p=112832#sthash.ZstBFfoM.dpuf

Viewing all articles
Browse latest Browse all 358

Trending Articles