Quantcast
Viewing all articles
Browse latest Browse all 358

পাঁচ বছরে দুর্নীতি-অনিয়মের এক লাখ কোটি টাকা পাচার

Image may be NSFW.
Clik here to view.
বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। অবৈধভাবে আয় ও দুর্নীতির মাধ্যমে আয় করা এসব অর্থ পাচার করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে ছোট ও মধ্যম সারির নেতারাও। পাচারের সঙ্গে আছেন প্রশাসনের শীর্ষ ও মধ্যম শ্রেণীর কর্মকর্তারাও। মূলত নিজেদের ভবিষ্যত্ নিয়ে উদ্বেগের কারণ থেকেই অর্থ পাচার বাড়ছে। এক হিসেবে দেখা গেছে, বছরে গড়ে দেশ থেকে চলে যাচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। শুধু গত বছর বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার হয়েছে ৩০০ কোটি ডলার। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ২৪ হাজার কোটি। সরকারের শেষ সময়ে এসে অর্থ পাচার বেড়ে গেছে। হিড়িক পড়ে গেছে বিদেশে বাড়ি-গাড়ি কেনার। এদিকে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) তাদের সাম্প্রতিক এক জরিপে জানিয়েছে, ২০১১ সালে আগের বছরের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার বেড়েছে ২৮ শতাংশ। সংস্থাটি অর্থ পাচারের এমন দৃষ্টান্তকে নজিরবিহীন উল্লেখ করেছে। জিএফআই’র হিসেবে এশিয়ার মধ্যে অর্থ পাচারের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থান দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশ। 
কোন গন্তব্যে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা, কারা পাচার করছেন এই অর্থ, বিনিয়োগ হচ্ছে কোথায়— এমন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে পাচার করা অবৈধ অর্থের সিংহভাগই গেছে মালয়েশিয়া, দুবাই ও সিঙ্গাপুরে। এই তিন গন্তব্য হয়ে পাচার করা অর্থ আবার যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে। পাচার করা অর্থের কিছু অংশ আবার বৈধ করতে রেমিট্যান্স হিসেবে দেশেও ঢুকছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে মালয়েশিয়ায় ‘সেকেন্ড হোম’ প্রকল্পে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী দেশের তালিকায় শক্তিশালী অবস্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশীরা। সরকারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আর বিদেশে পাড়ি জমানোর সংখ্যা বাড়ছে। তাদের পছন্দের দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে মালয়েশিয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর ব্যক্তিরা দেশের বাইরে নিরাপদ জায়গা খুঁজছেন। তুলনামূলক কম খরচে বাড়ি কেনা যায় বলে তাদের প্রথম পছন্দ মালয়েশিয়া। দুই বছর ধরে সেকেন্ড হোম কর্মসূচির ভিসা নেয়ার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান আগের ষষ্ঠ অবস্থান থেকে তিন নম্বরে উঠে এসেছে। এ সুবিধা পেতে মালয়েশিয়ার ব্যাংকে কোটি টাকা অঙ্কের অর্থ জমা রাখতে হয়। মালয়েশিয়া সরকারের তথ্যমতেই গত পাঁচ বছরেই এ খাতে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় পাচার হয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ মার্কিন ডলার। তবে সেকেন্ড হোম প্রকল্পের বাইরে আরও অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে মালয়েশিয়ায়। এই টাকা বিনিয়োগ হয়েছে বাড়ি-গাড়ি ও ফ্ল্যাট কেনায়। জানা গেছে, গত দুই বছর অর্থাত্ ২০১১ ও ২০১২ সালে বাংলাদেশী নাগরিকদের মধ্যে সেকেন্ড হোম কর্মসূচিতে সুযোগ গ্রহণের মাত্রা যেমন বেড়েছে, তেমনি দেশটিতে বাড়ি ও ফ্ল্যাট কেনার হারও বেড়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ পাচার নিয়ে গবেষণা করে থাকে গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি বা জিএফআই। সম্প্রতি তাদের প্রকাশিত এক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়, ২০০২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এক দশকে বাংলাদেশ থেকে অন্তত এক হাজার ৬০৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার বা এক লাখ ২৮ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা অবৈধভাবে বাইরে চলে গেছে। এর ফলে বিশ্বের যে ১৫০টি উন্নয়নশীল দেশ থেকে অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে, সে দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৪৭তম। আর দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। এতে দেখা যায়, আলোচ্য সময়কালে গড়ে প্রতিবছর ১৬০ কোটি ৮০ লাখ ডলার বা ১২ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা অবৈধ পথে বাংলাদেশের বাইরে স্থানান্তর করা হয়েছে। অস্বচ্ছ ব্যবসায়িক লেনদেন, দুর্নীতি ও কর ফাঁকির মাধ্যমে এ অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জিএফআই’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, আলোচ্য ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে গত ২০১১ সালেই। সংস্থাটির হিসেবে ২০১২ সালে এই অর্থের পরিমাণ আরও প্রায় ৩০ ভাগ বাড়বে।
কেন অর্থ পাচার বাড়ছে— জানতে চাইলে গ্লোবাল ইকোনমিস্ট ফোরামের প্রেসিডেন্ট এনায়েত করিম বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে আর্থিক খাতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে বর্তমান সরকারের গত পাঁচ বছরে। তিনি দাবি করেন, এই পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে অন্তত এক লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এর সিংহ ভাগ অর্থ আবার গেছে পুঁজিবাজার থেকে লুট হওয়া টাকা থেকে। এর বাইরে টেলি যোগাযোগ খাতের লাইসেন্স বিক্রি ও জ্বালানি-বিদ্যুত্ খাত থেকে বিপুল অঙ্কের অবৈধ অর্থ পাচার হয়েছে। যার সঙ্গে সরকারের বেশ কয়েকজন শীর্ষ আমলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ ও মধ্যম সারির নেতারাও জড়িত রয়েছেন।’ তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে পাচার করা অর্থ বিনিয়োগ বেড়েছে মালয়েশিয়ায়। তার তথ্যমতে, দেশটিতে গত দুই বছরে বর্তমান সরকারদলীয় অন্তত এক হাজার দলীয় নেতা ও ব্যবসায়ী নেতা বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছেন।
মালয়েশিয়ার পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম’ প্রকল্পের সরকারি ওয়েবসাইট থেকেও এ বিষয়ে একটা পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে। ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, ২০০২ সালে এই কর্মসূচি শুরু হলেও সে বছর কোনো বাংলাদেশীর এ সুযোগ নেননি। ২০০৩ সালে প্রথমে এ সুযোগ নেন ৩২ জন। ২০০৭ সালে সেকেন্ড হোম সুবিধা নেন ১৪৯ জন, ২০০৮ সালে ৬৮, ২০০৯ সালে ৮৬ ও ২০১০ সালে ৭৪ জন। বর্তমান সরকারের শেষ দিকে এসে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ থেকে উঠে এসেছে তিন নম্বরে। ২০১১ সালে বাড়ি কেনেন ২৭৬ জন আর ২০১২ সালে এ সংখ্যা ৩৮৮। চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত বাড়ি কিনেছেন ৯৪ জন।
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘এশিয়ান টিভি’র চেয়ারম্যান, বঙ্গবুন্ধ সৈনিক লীগের সহসভাপতি— আওয়ামী লীগ সমর্থিত ব্যবসায়ী নেতা হারুনুর রশিদ সপরিবারে মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম সুবিধা নিয়েছেন সম্প্রতি। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেকেন্ড হোম সুবিধা নেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি জানালেন, ‘দেশে রাজনৈতিক পরিবেশ খুব ভালো নয়, তাছাড়া মালয়েশিয়া ব্যবসার দিক থেকে নতুন সম্ভাবনাময় একটি দেশ।’ এ দুটি কারণ বিবেচনায় নিয়েই আমি এবং আমার পরিবারের সব সদস্যদের নিয়ে মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম সুবিধা নিয়েছি। হারুনুর রশিদ এশিয়ান টেক্সটাইলেরও কর্ণধার। যে প্রতিষ্ঠানটি বিগত বিএনপি সরকারের আমলে বাড়তি অনেক সুযোগ-সুবিধা নিয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

Viewing all articles
Browse latest Browse all 358

Trending Articles