Quantcast
Channel: Truth Revealer
Viewing all articles
Browse latest Browse all 358

কাদের মোল্লার মামলা : সাক্ষী নিয়ে ভয়াবহ জালিয়াতির অভিযোগ (ভিডিও

$
0
0
09 Dec, 2013
অন্য এক মহিলাকে মোমেনা বেগম সাজিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ হাজির করে ট্রাইব্যুনালে

* আসল মোমেনার ছবি পাওয়া গেছে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে

আব্দুল কাদের মোল্লার মামলায় সাক্ষী নিয়ে চরম জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। হযরত আলী পরিবার হত্যাকাণ্ডে আব্দুল কাদের মোল্লাকে আপিল বিভাগ সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেয়। এ ঘটনায় রাষ্ট্রপক্ষ একমাত্র সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে হযরত আলী লস্করের একমাত্র বেঁচে যাওয়া মেয়ে মোমেনা বেগমকে। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগম নামে যাকে হাজির করেছে এবং সাক্ষ্য গ্রহণ করিয়েছে সে হযরত আলী লস্করের মেয়ে আসল মোমেনা বেগম নয়। অপর এক মহিলাকে হযরত আলী লস্করের মেয়ে মোমেনা বেগম সাজিয়ে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী বানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ চাঞ্চল্যকর এ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে।

হযরত আলী লস্করের মেয়ে আসল মোমেনা বেগমের ছবি সংরিক্ষত রয়েছে মিরপুর জল্লাদখানা যাদুঘরে। এ ছবির সন্ধান পাওয়ার পরই জালিয়াতির এ ঘটনা উঘাটিত হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগম নামে যাকে হাজির করা হয়েছিল তার সাথে কোনই মিল নেই মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত হযরত আলী লস্করের মেয়ে আসল মোমেনা বেগমের। আসামী পক্ষের আইনজীবীদেরকে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত মোমেনা বেগমের ছবি দেখানো হলে তারা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, তারা কোর্টে সাক্ষী হিসেবে যে মোমেনা বেগমকে দেখেছেন তার সাথে কোনো মিল নেই মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত মোমেনা বেগমের ছবির। ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী হিসেবে হাজিরকৃত মোমেনা বেগম এবং মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত ছবির মোমেনা বেগম সম্পূর্ণ আলাদা দুজন মহিলা।


গত ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে দুটি অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করা দুটি অভিযোগের মধ্যে একটি অভিযোগ হলো মিরপুরে কালাপানি লেনে হযরত আলী, তার ছেলে, মেয়ে, স্ত্রীকে হত্যা ও মেয়েদের ধর্ষণের ঘটনা। দেশের সর্বোচ্চ আদালত বা বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ হযরত আলী পরিবারের হত্যা ঘটনায় আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে গত ১৭ সেপ্টেম্বর।

হযরত আলী পরিবার হত্যা ঘটনায় বেঁচে যায় হযরতী আলী লস্করের বড় মেয়ে মোমেনা বেগম। রাষ্ট্রপক্ষ এ ঘটনায় একমাত্র সাক্ষী হিসেবে মোমেনা বেগমকে হাজির করে ১৭ জুলাই ২০১২। ওইদিনই তার জবানবন্দী এবং জেরা সম্পন্ন হয়।

ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে অর্থাৎ রুদ্ধদ্বার বিচার কক্ষে মোমেনা বেগমের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। মোমেনা বেগমকে লম্বা নেকাবসহ কালো বোরখা পড়িয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে রাষ্ট্রপক্ষ। আসামী পক্ষের আইনজীবী জেরার সময় চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এই মোমেনা আসল মোমেনা বেগম নয়। কিন্তু তখন তারা এর পক্ষে কোন ডকুমেন্ট হাজির করতে পারেনি।

রুদ্ধদ্বার বিচার কক্ষে মোমেনা বেগমের সাক্ষ্য গ্রহণের সময় ট্রাইব্যুনালে শুধুমাত্র রাষ্ট্রপক্ষের এবং আসামী পক্ষের আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। বিচারক, কোর্ট রুমে উপস্থিত অন্যান্য স্টাফ এবং আইনজীবীরা সাক্ষী মোমেনা বেগমের চেহারা দেখেছেন। অন্য কারোর সামনে রাষ্ট্রপক্ষ তার চেহারা উন্মুক্ত করেনি তখন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত মোমেনা বেগমের ছবি সংগ্রহ করে কয়েকদিন আগে আসামী পক্ষের যেসব আইনজীবী ট্রাইব্যুনালে ওই সময় উপস্থিত ছিলেন তাদের দেখানো হলে তারা নিশ্চিত করেছেন ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগম সাজিয়ে যাকে হাজির করা হয়েছে সে প্রকৃতপক্ষে আসল মোমেনা বেগম নয়। রুদ্ধদ্বার বিচার কক্ষে মোমেনা বেগমের সাক্ষ্য গ্রহণের সময় আসামী পক্ষের তিনজন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। এরা হলেন, কফিলউদ্দিন চৌধুরী, একরামুল হক এবং সাজ্জাদ আলী চৌধুরী। তারা সবাই বলেছেন ট্রাইব্যুনালে তারা যে মোমেনা বেগমকে দেখেছেন সে মোমেনা বেগমের সাথে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত মোমেনা বেগমের কোন মিল নেই।

সাক্ষী মোমেনা বেগমের জবানবন্দী এবং মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত ডকুমেন্টে সম্পূর্ণ বিপরীত তথ্য :

ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী হিসেবে হাজির করা মোমেনা বেগমের জবানবন্দী এবং মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত মোমেনা বেগমের জবানবন্দীর মধ্যে সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মী তথ্য রয়েছে।

যেমন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী মোমেনা বেগম তার জবানবন্দীতে বলেছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যার সময় তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। খাটের নিচে লুকিয়ে থেকে পরিবারের সদস্যদের হত্যা এবং তার বোনকে ধর্ষণের ঘটনা দেখেছেন। এক পর্যায়ে তিনি নিজেও ধর্ষণের শিকার হন এবং পরে অচেতন হয়ে পড়েন। অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে মোমেনা বেগম নামে যার জবানবন্দী রক্ষিত রয়েছে তাতে দেখা যায় মোমেনা বেগম ঘটনার দুই দিন আগে তার শশুর বাড়িতে চলে যান। ফলে তিনি প্রাণে বেঁচে যান এ ঘটনা থেকে। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের প্রতিবেদনে দেখা যায়, মোমেনা বেগম তাদের পরিবারের হত্যার জন্য বিহারীদের দায়ী করেছেন। সেখানে কাদের মোল্লার কোন নাম গন্ধই নেই। কিন্তু ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগম নামে যাকে হাজির করা হয়েছে সে তার জবানবন্দীতে বলছে কাদের মোল্লার উপস্থিতিতে এবং নেতৃত্বে এ হত্যাকান্ড হয়েছে। সম্পূর্ণ উল্টো এ তথ্য থেকেও এটি প্রমাণিত যে, ট্রাইব্যুনালে হাজির করা মোমেনা বেগম এবং মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে যে মোমেনা বেগমের ছবি রয়েছে তারা দুজন আলাদা মহিলা। রাষ্ট্রপক্ষ অপর এক মহিলাকে মোমেনা বেগম সাজিয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির করিয়েছে এবং তাকে দিয়ে সম্পূর্ণ সাজানো মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে আসামীকে ফাঁসানো হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত মোমেনা বেগমের কথা : মিরপুর ১০ নম্বরে অবস্থিত পাম্প হাউজে এনে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বিহারীরা বাঙ্গালীদের হত্যা করত। হত্যার পর তাদের লাশ ফেলে দিত পানির ট্যাংকি এবং পার্শবর্তী ডোবায়। ১৯৯০ দশকে এখানকার বধ্যভূমিটি আবিষ্কার হয় এবং অসংখ্য শহীদদের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। এরপর পাম্প হাউজটিকে জল্লাদখানা যাদুঘর করা হয় এবং এটি বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের অংশ। জল্লাদখানায় ১৯৭১ সালে যাদের হত্যা করা হয়েছে যাদুঘর কর্তৃপক্ষ তাদের পরিবারের অনেক আত্মীয় স্বজনকে খুঁজে বের করে বিভিন্ন সময়ে তাদের সাক্ষাতকার, বক্তব্য রেকর্ড করে তা যাদুঘরে সংরক্ষণ করে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষ। শহীদ পরিবারের আত্মীয় স্বজনদের সাক্ষাতকার, লিখিত বক্তব্যের মূল কপি, অডিও ভিডিও বক্তব্য সংরক্ষিত আছে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে। এছাড়া লিখিত বক্তব্যের ডুপ্লিকেট কপি সংরক্ষিত আছে মিরপুর জল্লাদখানা যাদুঘরে।

যে হযরত আলী লস্করের পরিবার হত্যা ঘটনায় আব্দুল কাদের মোল্লাকে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক যাবজ্জীবন কারাদ- এবং আপিল বিভাগে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে সেই ঘটনার একটি বিবরণ রক্ষিত আছে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের কাছে। হযরত আলীর বেঁচে যাওয়া একমাত্র মেয়ে মোমেনা বেগমের বরাত দিয়েই সে ঘটনার বর্ননা লিপিবদ্ধ করে প্রতিবেদন আকারে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এখানে হযরত আলী পরিবার হত্যার ঘটনার বিবরণ রয়েছে। মোমেনা বেগমের সাক্ষাতকার গ্রহণের মাধ্যমে এ ঘটনার বিবরণ তারা সংগ্রহ করে। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের কাছে রক্ষিত সে ডকুমেন্টে বা প্রতিবেদনে লেখা আছে ঘটনার দুই দিন আগে মোমেনা বেগম তার শশুর বাড়ি চলে যান। ঘটনার সময় তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। ফলে একমাত্র তিনিই বেঁচে যান গোটা পরিবারের এ হত্যাকান্ড থেকে। মোমেনা বেগমের জবানবন্দীর সাথে তার একটি ছবিও সেখানে সংযুক্ত রয়েছে।

হযরত আলী হত্যাকাণ্ড বিষয়ে তার মেয়ে মোমেনা বেগমের সাক্ষাতকার যাদুঘর কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করে ২৮/৯/২০০৭ তারিখ। তিনি তখন তাদের কাছে ঘটনার যে বিবরণ দেন তার ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধ যাদঘুর কর্তৃপক্ষ যে প্রতিবেদন তৈরি করে এবং এখনো ডকুমেন্ট আকারে সংরক্ষিত রয়েছে তা নিম্নরূপ :

“ঘটনার বিবরণ : ১৯৭১ সালে মিরপুরের কালাপানি এলাকায় বিহারিদের সঙ্গে কিছু বাঙালি পরিবারও বাস করতো। ৭ মার্চ এর পর থেকে দেশের অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে কিছু কিছু বাঙালি পরিবার এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। অনেকের অন্যত্র যাওয়ার অবস্থা ছিল না ফলে এলাকায় রয়ে গেলেন। যে কয়েকটি পরিবার অন্যত্র যেতে পারলেন না তাদের মধ্যে একটি হযরত আলী লস্কর-এর পরিবার।

হযরত আলী লস্কর ছিলেন একজন দর্জি/খলিফা। মিরপুরেই তার দোকান ছিল। সকালে যখন এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন তখন হযরত আলী লস্করকেও তারা চলে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু তাঁর যাওয়ার জায়গা ছিল না। ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা শুরু হয়ে গেলে ২৬ মার্চ সকাল সাতটার দিকে বিহারিরা হযরত আলী লস্কর-এর বাড়ি ঘিরে ফেলে এবং তাকে ধরে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরই তারা তাঁর স্ত্রী, দুই কন্যা ও শিশু পুত্রকে ধরে নিয়ে যায় এবং সকলকে এক সঙ্গে নির্মমভাবে হত্যা করে পাশের বাড়ির কুয়োতে সব লাশ ফেলে যায়। বিহারিরা তার দ্বিতীয় কন্যা আমেনা বেগমকে ঘরের ভেতর সারাদিন আটকে রেখে ধর্ষণ করে। পরে তাকেও হত্যা করে সেই কুয়োতে ফেলে। হযরত আলীর বড় মেয়ে মোমেনা বেগম মাত্র দুইদিন আগে শ্বশুরবাড়িতে চলে যাওয়ায় একমাত্র সেই প্রাণে বেঁচে যায়। এখানে উল্লেখ্য যে, হযরত আলীর স্ত্রী সে সময় অন্তঃসত্ত্বা ছিল।

কয়েকদিন পরই এ খবর হযরত আলীর বড় মেয়ে মোমেনা বেগম জানতে পারেন। কিন্তু মিরপুরের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে তিনি বাড়ি আসতে পারলেন না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিজ বাড়িতে এসে তিনি আর কিছুই অবশিষ্ট পেলেন না। ভগ্নহৃদয়ে তিনি ফিরে গেলেন শ্বশুরবাড়িতে।”

ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী হিসেবে হাজির করা মোমেনা বেগম যা বলেছেন : ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে (রুদ্ধদ্বার কক্ষে বিচার পরিচালনা) মোমেন বেগমের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় ট্রাইব্যুনালে। ফলে সে সময় মোমেনা বেগমের সাক্ষ্য সংবাদ মাধ্যমে প্রচার বা প্রকাশিত হয়নি। তবে মোমেনা বেগম কোর্টে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তা আব্দুল কাদের মোল্লার রায়ে বর্ননা করা হয়েছে বিস্তারিতভাবে।

ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগমের জবানবন্দীর উদ্ধৃতি দিয়ে রায়ে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঘটনা ঘটে। মোমেনা বেগমরা তখন মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের ৫ নং কালাপানি লেনে ২১ নম্বর বাসায় থাকতেন। মোমেনা বেগম কোর্টে সাক্ষ্য দিয়ে ঘটনার বিষয়ে বলেন, সন্ধ্যার সময় তার পিতা হযরত আলী হন্তদন্ত হয়ে ঘরে আসলেন এবং বললেন, কাদের মোল্লা তাকে মেরে ফেলবে। কাদের মোল্লা এবং তার বিহারী সাগরেদ আক্তার গুণ্ডা তার পিতাকে হত্যার জন্য ধাওয়া করছে। তার পিতা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। এরপর তারা বাইরে বোমা ফাটাল। দরজা খোলার জন্য গালিগালাজ করল। তার মা দাও হাতে নিয়ে দরজা খুলল। তারা ঘরে ঢুকে গুলী করে হত্যা করল তার মাকে। কাদের মোল্লা তার পিতাকে কলার ধরে টেনে বাইরে নিয়ে গেল। তার সঙ্গীরা তার বোন খাদিজা এবং তাসলিমাকে জবাই করল। দুই বছরের ভাইকে আছড়িয়ে হত্যা করে।

মোমেনা জানায়, সে এবং তার ১১ বছর বয়স্ক অপর বোন আমেনা খাটের নিচে আশ্রয় নেয় ঘটনার সময়। আমেনা ভয়ে চিৎকার দেয়ায় তাকে খাটের নিচ থেকে টেনে বের করে জামাকাপড় ছিড়ে ফেলে এবং এক পর্যায়ে তার কান্না থেমে যায়। এক পর্যায়ে তাকেও টেনে বের করে এবং ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এক পর্যায়ে সে জ্ঞান হারায় এবং জ্ঞান ফিরে পেটে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করে। তার পরনের প্যাণ্ট ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পান তিনি। পরে এক ঘরে গিয়ে আশ্রয় নেন এবং তাদের সেবার মাধ্যমে কিছুটা সুস্থ হন। পরে তার শশুর খবর পেয়ে তাকে এসে নিয়ে যান।

রায়ে মোমেনা বেগমের বরাদ দিয়ে তাদের পরিবারের যে ঘটনার বর্ণনা করা হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত চিত্র এটি।

রায়ে আরো বলা হয়েছে, এ ঘটনায় একজনমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী জীবিত সাক্ষী এবং ক্ষতিগ্রস্ত হলেন মোমেনা বেগম। তার এভিডেন্সকে পাশ কাটানো যায়না বা সন্দেহ পোষণ করা যায়না।

রায়ে আসামী পক্ষের দাবি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, আসামী পক্ষ দাবি করেছে মোমেনা বেগম হযরত আলী লস্করের মেয়ে নন। তিনি যে হযরত আলী লস্করের মেয়ে সে মর্মে রাষ্ট্রপক্ষ কোন ডকুমেন্ট হাজির করেনি।

আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মোট ছয়টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয় এবং এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগে কারাদণ্ড প্রদান করা হয় আব্দুল কাদের মোল্লাকে। হযরত আলী হত্যা ঘটনাটি ছিল ছয় নম্বর অভিযোগ এবং এ অভিযোগসহ আরো একটি অভিযোগে যাবজ্জীবন প্রদান করা হয়। হযরত আলী আওয়ামী লীগ করার কারণে এবং স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেয়ার কারণে আব্দুল কাদের মোল্লা বিহারী এবং আর্মিদের সাথে নিয়ে তাকেসহ পরিবারের লোকজনকে হত্যা করে মর্মে অভিযোগ করা হয় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে।

রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট ছয়টি অভিযোগ এনেছিল। ছয়টি অভিযোগের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল আব্দুল কাদের মোল্লাকে দুইটি অভিযোগে যাবজ্জীবন, তিনটি অভিযোগে ১৫ বছর করে কারাদ- দেয়। একটি অভিযোগ থেকে খালাস দেয়।

আপিল বিভাগের রায়ে একটি যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এ অভিযোগটি হলো মিরপুরে কালাপানি লেনে হযরত আলী, তার ছেলে, মেয়ে, স্ত্রীকে হত্যা ও মেয়েদের ধর্ষণের ঘটনা। এটি ছিল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনীত ছয় নং অভিযোগ।

এছাড়া ট্রাইব্যুনালের অপর চারটি অভিযোগে প্রদত্ত সাজা বহাল রাখা হয় আপিল বিভাগের রায়ে। অপরদিকে একটি অভিযোগ থেকে ট্রাইব্যুনাল আব্দুল কাদের মোল্লাকে খালাস দিলেও আপিল বিভাগ ওই অভিযোগে যাবজ্জীবন সাজা দেন। অর্থাৎ ছয়টি অভিযোগেই আপিল বিভাগ সাজা দেয় আব্দুল কাদের মোল্লাকে।


Viewing all articles
Browse latest Browse all 358

Trending Articles